এস্কিমোদের বরফমানবই বলা যায়। তাদের বসবাস বরফ ঢাকা অঞ্চলে।
বরফ আচ্ছাদিত মানুষের জীবন-জীবিকা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া আর্কটিক বরফ অঞ্চলের অধিবাসীরা আমাদের কাছে এস্কিমো নামে পরিচিত।

এস্কিমো শব্দটির অর্থ কাঁচা মাংস ভক্ষণকারী। এরা কাঁচা মাংস খায় বলে রেড ইন্ডিয়ানরা শব্দটির এমন অর্থ করেছেন। উল্লেখিত অঞ্চল ছাড়া এস্কিমোরা গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও অন্য সুমেরু অঞ্চলেও বসবাস করে।
আজকাল এস্কিমোরা ইনুইট নামেও পরিচিতি।
এস্কিমোরা কিন্তু দলপ্রিয় এবং দলে দলে বসবাস করতে ভালোবাসে। প্রতিটি দলে থাকে দলপতি বা দলীয় প্রধান। দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলীয় কোন্দল বা কলহ দলের প্রধানই মীমাংসা করে দেন। দলের প্রতিটি সদস্যই সমান। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে এদের কিছু নেই।
এস্কিমোদের জীবনযাত্রা খুবই কঠিন। প্রচণ্ড শীতে এরা থাকতে অভ্যস্ত। জীবনের চাহিদাও কম। সমুদ্রের সীল, তিমি ইত্যাদি শিকার করে নিজেদের খাবার, ঘরবাড়ি, তেল ও জ্বালানির ব্যবস্থা করে।

প্রবল মরুঝড়, শীতল তুষারের রাজ্যে এরা যেভাবে থাকে তার কোনো তুলনা নেই। কম শীতের সময় যদি তারা বেশি শিকার করতে পারে, তাহলে সারাবছর তাদের ভালো কাটে। গ্রীষ্মকালে এরা বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। প্রাণ তুচ্ছ করে নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে সমুদ্রে। শিকার করে তিমি আর সিন্ধুঘোটক।
এস্কিমোরা অনেক অলৌকিক বিষয়ে বিশ্বাস করে। এদর একটি দানবকন্যা সেডনার কাহিনী।
অনেক বছর আগে পৃথিবীতে ছিলো এক দানব-দানবী দম্পতি। কেউ জানতো না এরা কীভাবে জন্মালো। তাদের প্রবল দাপট আর অলৌকিক ক্ষমতা ছিলো। তারা জলে স্থলে শিকার করে বেড়াতো। তাদের ছিলো একটি সন্তান। সে মেয়ে।

এক সময় মাংস খাওয়া তার ভয়ংকর লোভে পরিণত হলো। যে জন্তু-জানোয়রই পেতো তার মাংস ছিঁড়ে চেটেপুটে খেয়ে নিতো।
দানবকন্যার ভয়ে চারদিকে পালাও পালাও রব পড়ে গেলো। কিন্তু পালাবে কোথায়। বরফ, জল যেখানেই পালাক না কেন দানবকন্যা তাকে ঠিকই ধরে ফেলবে।
তার এই মাংস খাওয়ার লোভে তার বাবা মাও ভিষণ ভয় পেয়ে গেলো। তারা বুঝলো এভাবে মাংস খেতে থাকলে কিছুদিন পর তো জন্তু-জানোয়ারই আর থাকবে না।

তারপর তার বাবা-মা তাকে জোর করে তিমি ধরার চামড়ার নৌকায় করে নিয়ে গেলো গভীর সমুদ্রে। মেয়েকে তারা শাস্তি দেওয়ার জন্য কাটতে শুরু করে হাত পা।
কিন্তু তারপর যা ঘটলো তা আরও ভয়ংকর। সে এক অলৌকিক কাণ্ড। যেই তার আঙুল কেটে জলে ফেলেছে অমনি সেগুলো হয়ে গেলো বিশাল বিশাল তিমি, সীল আর সিন্ধুঘোটক। তাই দেখে দানবীর বাবা-মা মেয়েকে জলে ফেলে দাঁড় টেনে চলে আসে পাড়ে।
তারপর বহুদিন কেটে গেলো। বাবা-মা আর কোনোদিন মেয়ের খোঁজ করলো না। একদিন দানব-দানবী হলেও সাধারণ এস্কিমোদের মতো ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু হলো তাদের।
ওদিকে দানবকন্যা কিন্তু মরেনি। সে এখন বাস করে জলের নীচে। তার নাম হয় সেডনা। সেই থেকে সেডনা দানবকন্যা থেকে হয়ে যায় সমুদ্রের দেবী বা মাতা। তার নির্দেশেই চলতে থাকে সমুদ্রের প্রাণীকুল।

এস্কিমোদের মধ্যে ভয় পেয়ে কোনো মানুষ মরে গেলে তারা সমাধি দেওয়া অবস্থায় আত্মায় ভর করে কথা বলতো। এসব মানুষদের বলা হতো সাম্যান। এরা এস্কিমোদের উপকার ছাড়া ক্ষতি করে না। কোনো বিপদ-আপদ, সুবিধা-অসুবিধা সব সাম্যানরাই দেখতো। এই আত্মায় ভর করা মানুষগুলো তাদের ভবিষ্যৎও বলে দিতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করে।
এই সাম্যানদের সঙ্গে সেডনার দেখা হওয়ার কল্পনাটি ভারি চমৎকার।
যখন এস্কিমোদের দেশে দারুণ খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, তখন সাম্যান ধ্যানে বসে। তারপর তার দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে যায় অনেক উঁচুতে। উড়তে উড়তে এসে পড়ে সমুদের জলের গভীরে। জলের নীচে নামতে নামতে সাম্যানের আত্মা ঢুকে পড়ে এক সুন্দর সামুদ্রিক প্রাণীদের চামড়ার তৈরি তাঁবুর ভেতর। সেই তাঁবুর মধ্যে ছিলো কালো ভয়ংকর দেবী সেডনা। সেডনার সামনে সাম্যান সুরেলা কণ্ঠে অত্যন্ত নরম সুরে এস্কিমোদের দুঃখকষ্টের কথা বলে।
শুধু তাই না, সাম্যান তার সামনে নেচে এবং মজার মজার কথা বলে খুশি করতেও চেষ্টা করে। সেডনাও এক সময় খুশি হয়ে যায়। তখন সে এস্কিমোদের কি করতে হবে তা বলে দেয়। কখনও কখনও সাবধানও করে দেয়।

সেডনার নির্দেশ নিয়ে সাম্যান চলে আসে এস্কিমোদের দেশে। ঢুকে পড়ে তার নিজের শরীরে। তারপর সমাধি থেকে উঠে দেবী সেডনার নির্দেশের কথা জানিয়ে দেয় সবাইকে। ভংয়কর বিপদ থেকে বেঁচে যায় বরফমানব এস্কিমোরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৩
সূত্র: পৃথিবীর পৌরাণিক ইতিহাস ও ইন্টারনেট
[email protected]