ঢাকা, সোমবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২, ০৫ মে ২০২৫, ০৭ জিলকদ ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আমাদের পতাকা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১০, মার্চ ৩০, ২০১৫
আমাদের পতাকা

আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের গৌরব। লাল-সবুজ এই পতাকা আমাদের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতীক।



বাংলাদেশের পতাকার সঙ্গে নতুন করে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সেই ছোট থেকেই পতাকার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমাদের। কিন্তু জাতীয় পতাকার অনেক তথ্যই হয়তো রয়েছে অজানা।

আমাদের জাতীয় পতাকার রংটা তো সবাই জানি- গাঢ় সবুজের মধ্যে লাল বৃত্ত। কেন এই রং হলো পতাকার তা কি জানো?

আমাদের পতাকার সবুজ রংটা বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, আর লাল বৃত্ত উদীয়মান সূর্য ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের প্রতীক।

undefined


অবশ্য প্রথম যখন জাতীয় পতাকার নকশা করা হয়, তখন কিন্তু পতাকাটা এমন ছিলো না। লাল বৃত্তের মাঝখানে ছিলো সোনালি রঙে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র।

১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আসার কথা ছিলো। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় ‘জয়বাংলা বাহিনী’। ছাত্রনেতারা তখন একটি পতাকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭০ সালের ৬ জুন তারা এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১০৮ নম্বর রুমে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত হয় পতাকার নকশা। সেই নকশায় পতাকার সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের ভেতরে ছিল স্বাধীন বাংলার মানচিত্র।

এরপর নিউমার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে কামরুল আলম খান সবুজ কাপড়ের উপরে লাল বৃত্ত সেলাই করে আনেন। ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু মানচিত্রের বই থেকে ট্রেসিং পেপারে আঁকেন স্বাধীন বাংলার মানচিত্র। এরপর ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ পতাকার লাল বৃত্তের ভেতরে মানচিত্রটি আঁকেন।

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব। ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

undefined



আমাদের জাতীয় পতাকায় যে মানচিত্রটা ছিল, ১৯৭২ সালে সেটা বাদ দেওয়া হয়। পটুয়া কামরুল হাসান পরিমার্জন করেন পতাকার মাপ, রং ও ব্যাখ্যা। এখন আমরা যে পতাকা দেখি, এটা আমাদের প্রথম জাতীয় পতাকার সেই পরিমার্জিত রূপ।

আমাদের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০‍ঃ৬। অর্থাৎ, পতাকার দৈর্ঘ্য যদি ১০ ফুট হয়, তাহলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট। এই অনুপাতেই যেকোনো মাপের পতাকা তৈরি করতে হবে। পতাকার লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ।

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থানে সব কর্মদিবসেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি তাদের মোটরযান ও জলযানে ব্যবহার করতে পারেন জাতীয় পতাকা। অন্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা রাজধানীর বাইরে দেশের অভ্যন্তরে কিংবা দেশের বাইরে তাদের যানবাহনে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং অন্যান্য স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। শহীদ দিবস, জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার ঘোষিত অন্য যেকোনো দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হয়।

আমাদের পতাকা আমাদের অহংকার। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে এই পতাকা। তাই জাতীয় পতাকার প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।