ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

টু বি এ গুড হিউম্যান বিং | মহিউদ্দীন আহ্মেদ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৫
টু বি এ গুড হিউম্যান বিং | মহিউদ্দীন আহ্মেদ

আমি বললাম, ‘বলো তো, টু বি এ গুড হিউম্যান বিং অর্থ কি?’
নীল বললো, ‘ইট’স ইজিয়েস্ট। ভালো মানুষ হও।


‘বাহ! তুমি তো দেখছি ভালোই ইংরেজি শিখেছো। তুমিও একজন ভালো মানুষ হও বাবা। ’
‘আচ্ছা হবো। তুমি এখন একটি গল্প বলো!’
‘গল্প!’
‘হ্যাঁ। হাসির গল্প। ’
‘আমি তো গল্প জানি না। ’
‘তাহলে আমিও ভালো মানুষ হবো না!’Ñবলে বিজয়ীর ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো নীল।
ছেলেকে নৈতিকতা শেখাতে গিয়ে মহা মুশকিলে পড়ে গেলাম। অসহায় ভঙ্গিতে নীলের দিকে তাকিয়ে দেখি, ও মিটিমিটি হাসছে।   
আমি ওকে অনুরোধ করে বললাম, ‘অন্য কিছু বলোÑঝটপট করে দিচ্ছি!’
‘উহু, আই নিড আ স্টোরি। ’

ওর কথা বলার ধরন দেখে বুঝতে পারলাম, গল্প না হলে চলবে না। তাই প্রাণপণে একটি গল্প মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু কোনো গল্প মনে পড়লো না।

হঠাৎ আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়লো। তখন আমিও ঠিক নীলের বয়সী। আমার দাদু প্রতিদিন আমাকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতেন। দাদু ভুরি ভুরি গল্প জানতেন। এমনকি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতেও তার জুড়ি ছিলো না। মজার মজার গল্প শুনে আমি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতাম। আমার দাদু যেকোনো গল্পকে ইলাস্টিকের মতো টেনে টেনে লম্বা করতে পারতেন। গল্পের সাথে সাথে আমার হাসিও ইলাস্টিকের মতো লম্বা হয়ে যেতো। কী যে ভালোলাগতো তখন! আমি হাসতে হাসতে, ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম, বুঝতেই পারতাম না। কিন্তু সেসব গল্পের কোনোটিই আমার পুরোপুরি মনে নেই। কী করি এখন?

ওদিকে ডিবি পুলিশের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে নীল। আমাকে চমকে দিয়ে বললো, ‘কী ভাবছো আব্বু?’    
‘না ইয়ে মানে...একটি গল্প মনে করার চেষ্টা করছি। ’
‘ও গুড। তাড়াতাড়ি করো। গল্প না হলে কিন্তু আমার ঘুম আসবে না!’
তোমাদের বলে রাখিÑ নীল এই যে বললো, গল্প না হলে ওর ঘুম আসবে নাÑ এর অর্থ হলো ও আসলে ঘুমাবে না। টিভিতে কার্টুন দেখবে। কার্টুন দেখতে দেখতে বারবার বাসার সামনের মাঠের দিকে তাকাবে। বিকেলের আজান পড়ামাত্র যখন ওর বন্ধুরা মাঠে চলে আসবে, তখন ওকে আর বেঁধেও বাসায় রাখা যাবে না। দৌড়ে মাঠে চলে যাবে। কিন্তু আমরা চাইÑনীল অন্তত দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে তবে খেলতে যাক।

‘মনে পড়েছে গল্প?’Ñ নীল বলে উঠলো।
আমি কী বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না।
সন্দেহের চোখে আমাকে দেখে নিয়ে নীল বললো, ‘তুমি কি গল্প বলতে পারবে?’
আমি চট করে বলে ফেললাম, ‘অবশ্যই। ’
‘তাহলে শুরু করো। গল্প শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ’
কী আর করা। দাদুর কাছে শোনা একটি গল্পের যতটুকু মনে আছে, তা দিয়েই আমি শুরু করলাম।   


একদিন এক বাড়িতে ডাকাত এলো। বড় বড় গোঁফঅলা তিন ডাকাত। ওই বাড়িটি ছিলো এক বৃদ্ধের। তার নাম মাখরাজ খান। তার ছেলেমেয়েরা কেউ সুইজারল্যান্ড, কেউ আমেরিকা, কেউ কানাডা থাকতো। নিজের প্রিয় বাড়ি রেখে অন্য কোথাও ভালোলাগে না বলে তিনি একাই বাড়িটিতে রয়ে গেছেন। অবশ্য কয়েকজন কাজের লোক আছে তার।
তো ডাকাতরা করলো কীÑ খাঁ সাহেবকে চট করে বেঁধে ফেললো এবং বললো, ‘আপনি খাটের নিচে গিয়ে লুকান। চিৎকার করলে গুলি। ’
খাঁ সাহেব খাটের নিচে লুকাতে পারলেন না। কারণ, তিনি খুব মোটা। তার ভুঁড়িটা ইয়া বড়। ডাকাত সর্দার প্রচণ্ড রেগে বললো, ‘কী ব্যাপার! আপনি লুকাচ্ছেন না কেনো?’    

খাঁ সাহেব ভয়ে ভয়ে বললেন, ‘দেখছো আমি কত মোটা? ওখানে আমার জায়গা হবে না। ’

সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতরা খাট উঁচু করে ধরলো এবং বললো, ‘জলদি ঢুকুন। ’
অবশেষে তিনি খাটের নিচে ঢুকলেন। কিন্তু ডাকাতরা খাট ছেড়ে দেওয়ামাত্র তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘মরে গেলাম। বাঁচাও। বাঁচাও!’
ডাকাত সর্দার বললো, ‘কী হয়েছে?
‘আমার পেটে ভীষণ চাপ লাগছে!’
সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতরা খাটের চার পায়ার নিচে চারটি ইট দিয়ে দিলো। এতে খাঁ সাহেবের চিৎকার বন্ধ হলেও ময়লার কারণে তাঁর ভীষণ হাঁচি হতে লাগলো।
ডাকাতরা কী করবে বুঝতে পারলো না।
হাঁচি থামলে খাঁ সাহেব বললেন, ‘তোমরা কোন স্কুলে পড়াশোনা করেছো?
ডাকাত সর্দার বললো, ‘ভুয়াপুর স্কুলে। ’   
‘তোমাদের মা-বাবাও কি ডাকাতি করতো?’

এবার তারা লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলো। ঠিক তখনই আবার খাঁ সাহেবের হাঁচি শুরু হলো। একের পর এক হাঁচি দিয়ে তিনি দুর্বল হয়ে পড়লেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘তোমরা আমাকে এখান থেকে বের করো। না হলে আমি মরে যাবো। ’
ডাকাতরা ভয় পেয়ে দ্রুত খাঁ সাহেবকে খাটের নিচ থেকে বের করলো এবং তার বাঁধন খুলে দিলো।
ডাকাত সর্দার বললো, ‘আপনার সমস্যা কী?’
খাঁ সাহেব তখন এতোই দুর্বল যে, ঠিকমতো কথা বলতেই পারছিলেন না। খুব কষ্ট করে বললেন, ‘ড্রয়ার থেকে আমার ইনজেকশনটা আনো। এখন ইনজেকশন না নিলে আমি ১০ মিনিটের মধ্যে মরে যাবো। ’
ডাকাত সর্দার ইনজেকশন এনে দিলো।
‘আমাকে এক্ষুণি এটা দিয়ে দাও। ’
‘আমি ডাক্তার না, ডাকাত। এসব কাজ আমরা পারি না। ’
‘আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, চেষ্টা করো। ’

অবশেষে খাঁ সাহেবের সহায়তায় ডাকাত সর্দার ইনজেকশন দিতে সক্ষম হলেন। তিনি কিছুটা সুস্থ হতে শুরু করলেন। তারপর ডাকাত সর্দারের দিকে আলমারির চাবি এগিয়ে দিলেন, ‘এই নাও। ’
ডাকাতরা ভীষণ অবাক হয়ে গেলো। এমন বাড়িঅলা তারা জীবনেও দেখেনি যিনি ডাকাতদের হাতে আলমারির চাবি তুলে দেন!


আলমারি খুলতেই ফণাতোলা একটি সাপ বেরিয়ে পড়লো। ডাকাতরা ভয় পেয়ে হাউমাউ করতে করতে খাঁ সাহেবের কাছে ফিরে গেলো।
‘হা হা হা...তোমরা ভয় পেয়েছো? কিন্তু ওটা তো আসল সাপ নয়, প্লাস্টিকের। আমার ছোট্ট নাতনি অবন্তিÑসুদূর সুইজারল্যান্ড থেকে আমাকে পাঠিয়েছে। গিফট।

ডাকাত সর্দার বললো, ‘সত্যি বলছেন?’
‘সত্যি নয় তো কী!’
ডাকাতরা বোকার মতো একজন আর একজনের দিকে তাকালো। ইশারায় কী যেন বললো। তারা ভাবলো আজ আর ডাকাতি করবে না। তারপর তারা চলে যেতে লাগলো।

দাঁড়াও। ’Ñখাঁ সাহেব তাদের থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার, তোমরা চলে যাচ্ছো যে?’
ডাকাত সর্দার বললো, ‘আপনার মতো একজন ভালো মানুষের বাড়িতে ডাকাতি করতে ভালো লাগছে না। ’
ডাকাতের কথা শুনে খাঁ সাহেব খুশি হয়ে সর্দারের হাতে ৩০০ টাকা দিলেন আর বললেন, ‘তিনজনে ভাগ করে নিয়ো। ’ ডাকাতরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
‘তোমরা তালা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করেছো। অনেক কষ্ট হয়েছে তোমাদের। তাছাড়া আমার সেবা করেছো। তাই তোমাদের কিছু টাকা দিলাম!’
ডাকাতের প্রতি খাঁ সাহেবের এমন অমায়িক ব্যবহার দেখে ডাকাতরা বিস্মিত ও লজ্জিত হলো।

খাঁ সাহেব বললেন, ‘বি এ গুড হিউম্যান বিং। ’
ডাকাত সর্দার বললো, ‘আমরা ইংরেজি জানি না। বাংলায় বলেন। ’
খাঁ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, ‘ভালো মানুষ হও!’ 


বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।