ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রাত এলো যেমন করে

ভাষান্তর: সানজিদা সামরিন/ মূল: ব্রাজিলের লোককাহিনী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৫
রাত এলো যেমন করে

অনেক অনেক বছর আগের কথা। শুরুতে পৃথিবীতে রাত বলে কিছু ছিল না।

গোটা পৃথিবী জুড়ে কেবল আলো আর আলো। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত ও পূর্ণিমা-অমাবস্যা যে কী, তা মানুষ জানতোই না। কারণ, সারাক্ষণ আকাশ জুড়ে রাজত্ব করতো গনগনে সূর্য। রাতের কোনো পাখি, ফুল বা প্রাণীর বসবাস ছিল না পৃথিবীতে।

সেসময় সমুদ্রে বাস করতো এক মস্ত বড় সাপ। যার রাজত্ব ছিল গভীর সমুদ্রের নিচে। সর্পরাজ তার সুন্দরী কন্যাকে বিয়ে দিলেন পৃথিবীর এক মানুষের সঙ্গে। সর্পকন্যা তাকে বিয়ে করে মানুষ হয়ে জল ছেড়ে ডাঙায় এসে থাকতে শুরু করলো। যেখানে ছিল শুধুই দিন আর দিন।

এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। এক পর্যায়ে সর্পকন্যার কাছে অবিরাম এ সূর্যের আলো অসহ্য হয়ে উঠলো।

এদিকে, গনগনে সূর্যের তাপে তার সুন্দর রূপ ঝলসে যেতে শুরু করেছে। সর্পকন্যার স্বামী ব্যাপারটি খেয়াল করলো। কিন্তু এ অবস্থায় ঠিক কী করা উচিত, তা তার মাথায় এলো না।

একদিন খাটের উপর শুয়ে সর্পকন্যা কেঁদে কেঁদে নিজ মনেই বলে উঠলো, ইস্ যদি রাতকে ফিরে পেতাম। এত আলো কী করে সহ্য করি! বাবার বাড়ি ছিল আলোছায়া আর শান্তিতে ভরা। যদি দিনের খানিকটা হলেও রাত পাওয়া যেত!

তার স্বামী কিন্তু লুকোনো কান্না ঠিক দেখে ফেললো।

সে সর্পকন্যাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আমাকে বলো, রাত কী আর কিভাবে তা তোমাকে এনে দিতে পারি। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।

সর্পকন্যা মুচকি হেসে বললো, রাত! সে হলো কালো এক ছায়া। যে ছায়া দিয়ে সমুদ্রের গভীরে আমার বাবার বাড়ি ছেয়ে রয়েছে। এখানকার সূর্যালোক আমার অপ্রিয় নয়। তবে সারাদিনের খানিকটা সময় যদি রাত হতো, তাহলে আমি কিছুক্ষণের জন্য হলেও শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারতাম।

সর্পকন্যার স্বামী স্ত্রীকে খুশি করার জন্য বিশ্বস্ত তিন চাকরকে পাঠালেন সমুদ্রতলে। সর্পরাজের রাজ্যে গিয়ে সর্পকন্যার জন্য কিছু রাত আনাই তাদের কাজ।

তিন চাকর সমুদ্রে গিয়ে সর্পরাজের অনুমতি নিয়ে বিশাল এক ঝুলিতে রাত ভরে নিলো। কিন্তু সর্পকন্যার স্বামী তাদের নির্দেশ দিয়েছিল, তার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যেন ঝুলি না খোলা হয়।

তবে তারা রাত নিয়ে ফেরার পথে ঝুলির ভেতর থেকে ভয়ঙ্কর আর অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পেল। তারা খুব ভয় পেয়ে গেল। কিছুটা কৌতূহলও জাগলো মনে। কী রয়েছে এই ঝুলিতে? শব্দইবা হচ্ছে কীসের!

ভয় আর কৌতূহলে তারা ঠিক করলো, ঝুলি খুলে দেখবে কী রয়েছে এতে। যখনই তারা ঝুলি খুললো অমনি সঙ্গে সঙ্গে রাতের সব পশু-পাখি হুল্লোড় করে বেরিয়ে এলো। সঙ্গে এলো রাতের ঘনকালো মেঘ। চারদিকে নেমে এলো অন্ধকার। এমন কাণ্ড দেখে তিন চাকর দিলো ভোঁ দৌড়।

এদিকে, অপেক্ষায় থাকা সর্পকন্যা রাত এসে পড়ায় খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলো। সে ঠিক করলো, বড় পামগাছের নিচে লম্বা সময় ঘুমিয়ে নেবে। কতদিন সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি! 

কিন্তু তিন চাকর পালিয়ে গিয়েও বাঁচলো না। বারণ করা সত্ত্বেও কথা না শোনার জন্য মালিক তাদের বানর বানিয়ে দিলেন।

সেদিন থেকেই দিনের একটি অংশ জুড়ে থাকে রাত। দিনে আলো দেয় সূর্য আর দিন শেষে আকাশে ওঠে রুপালি চাঁদ। তাকে সঙ্গ দেয় ঝলমলে তারার দল। আর রাত জেগে থাকে নিশাচর পশু-পাখিদের চোখের তারায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৫
সম্পাদনা: এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।