ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
ঐতিহাসিক পলাশী দিবস

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই পলাশীর যুদ্ধের কথা শুনেছো। এই য‍ুদ্ধেই ইংরেজদের সঙ্গে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধ হয়।



আজ ২৩ জুন। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশীর আম্রকাননে সংঘটিত হয় পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলে প্রায় দু’শ বছর ইংরেজরা এদেশ শাসন করে। তাই ২৩ জুন পলাশী দিবস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। চলো এবার একটু গোড়া থেকে জেনে নিই-

১৭৪০-১৭৫৬ সাল। সেসময় বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব ছিলেন আলীবর্দী খান। সেসময়ে ইংরেজরা এদেশে ব্যবসা করতে আসতো। মোঘল শাসকরা তাদের করমুক্ত ব্যবসা করার সুবিধা দেন। ১৭৫৬ সালে আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার নাতি সিরাজউদ্দৌলা নবাবের দায়িত্ব নেন। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলার নবাবের অ‍াসন গ্রহণ নিয়ে তার চারপাশের অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন ও ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ইংরেজরাও জড়িত ছিলো।

রবার্ট ক্লাইভের নাম নিশ্চয়ই শুনেছো। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি। নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম কর্ণধার তিনি।


যাইহোক, এসময় নবাবের অনুমতি ছাড়াই ইংরেজরা কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরি করে। এ‌তে নবাব রেগে গিয়ে কলকাতা দখল করেন ও কলকাতার নাম বদলে রাখেন আলীনগর। পরে অবশ্য ইংরেজরা ফের কলকাতা পুনর্দখলের চেষ্টা করে। ঠিক এসময় ইংরেজরা নবাবের সঙ্গে একটি লোকদেখানো সমঝোতা করে।

এছাড়াও ইংরেজরা মোগল সম্রাটের দেওয়া বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহার করলে নবাব এতে বাধা দেওয়ায় তারা নবাবের ওপর চটে যায়। এসব ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে এবং রবার্ট ক্লাইভ ও তার অনুচরেরা নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনা করতে থাকে।  


এসব ঘটনার পাশাপাশি নবাবের অন্দরমহল থেকেও কিছু বিশ্বাসঘাতক অগোচরে ‍ইংরেজদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এদের মধ্যে  মীর জাফর, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, মাহতাব চাঁদ, উর্মিচাঁদ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, ঘষেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ, নন্দকুমার উল্লেখযোগ্য।
 
সেদিন ছিলো ২৩ জুন, বৃহস্পতিবার। সকাল আটটায় মুর্শিদাবাদ থেকে ১৫ ক্রোশ দক্ষিণে ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে শুরু হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে ছিলো প্রায় ৬৫ হাজার সেনা, যেখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ছিল মাত্র তিন হাজার। তবে সৈন্যসংখ্যা বেশি থাকলেও মীর জাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভের অধীন প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ সৈন্যই যুদ্ধে অংশ নেয়নি।


এদিকে বৃষ্টি নামায় নবারের পক্ষের কামানের গোলায় ব্যবহৃত গান পাউডার ভিজে যায় ও মীর মর্দান নিহত হন। এই বিপদে নবাব মীর জাফরের কাছে পরামর্শ চাইলে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর নাবাবকে যুদ্ধ বন্ধ করে পরের দিন যুদ্ধ করার পরামর্শ দেন। নবাব যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তুতি নিলে মীর জাফর রবার্ট ক্লাইভের বাহিনীকে এ তথ্য দেন।  

তখন ইংরেজরা নবাবের বাহিনীর ওপর হঠাৎ হামলা চালায় এবং পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে। পরবর্তী বাংলা প্রায় দু’শ বছর ইংরেজদের অধীনে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।