ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মিথ্যে বলা নীলপরি | নাজিয়া ফেরদৌস

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
মিথ্যে বলা নীলপরি | নাজিয়া ফেরদৌস

খুব ভোরে আকাশ যখন লাল হয়ে ওঠে তখনই ঘুম থেকে আমি উঠে পড়ি। সকালে ওঠার মজাই আলাদা।

ঠাণ্ডা বাতাস, কোনো হইচই নেই, খুব সুন্দর মনে হয় পৃথিবীটাকে। সেদিনও আমি খুব ভোরে উঠেছিলাম। আমার ছোট্ট ফুলের বাগানটাতে গিয়ে নীল অপরাজিতা ফুলের গাছটার কাছে গিয়ে বসলাম। অনেক অনেক নীল ফুল ফুটেছে গাছটাতে। খুব ছোট ছোট লাল লাল পোকা খেলে বেড়াচ্ছে ডালে ডালে। দেখতে আমার খুব ভালো লাগছিলো।

হঠাৎ চোখে পড়লো লাল পোকাগুলোর সাথে একটা একটু বড় নীল পোকাও উড়ে বেড়াচ্ছে। খুব সুন্দর নীল পোকাটা। কিন্তু একটু পরেই বুঝলাম ওটা পোকা না, মানুষ! উড়ন্ত, ডানা ওয়ালা ছোট্ট একটা মানুষ। আমি একটু ভয় পেলাম, ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি। থপ করে বসে পড়লাম ঘাসে। চিমটি কেটে দেখলাম, নাতো, স্বপ্ন তো নয়। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার দেখলাম পাতার আড়ালে পোকাগুলো খেলছে সাথে সুন্দর নীল মানুষটাও।

একটা মেয়ে, নীল রঙের জামা পরা, নীল তার ডানা। আমি মনে মনে ওর নাম দিলাম নীলপরি। আরো ভালো করে দেখার জন্য যেই আমি পাতাগুলো সরিয়েছি পোকাগুলো ভয় পেয়ে উড়ে গেলো আর পরিটা ভয় পেয়ে পালাতে গিয়ে তার ডানা মাকড়শার জালে আটকে গেলো। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলো সে। জাল থেকে ডানা ছাড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। আমি খুব মিষ্টি করে হেসে নরম গলায় বললাম- ভয় পেয়ো না নীলপরি, আমি তোমাকে মুক্ত করে দেবো। তুমি আমার বন্ধু হবে।

তারপর আমি পরীটাকে জাল থেকে ছাড়ালাম। সে আমার হাতের তালুতে এসে বসলো। নীলপরি নামটা তার খুব পছন্দ হয়েছিলো। মাত্র এক আঙুল সমান লম্বা হবে নীলপরি। সে আমাদের মতই কথা বলতে জানে। তারও পরিবার আছে কিন্তু তারা মানুষের মত বড়। আমি বললাম- তাহলে তুমি এত ছোট হলে কি করে নীলপরি? সে বললো, এটা অনেক দিন আগের কথা-

আমি তখন খুবই দুষ্টু ছিলাম। পোকাদের জ্বালাতন করতাম, পিঁপড়েদের ধরে রাখতাম আরো কত যে দুষ্টুমি করতাম ! একদিন আমি লাল পোকাদের বাসার কাছে চুপি চুপি গেলাম। সেখানে যাওয়া ছোটদের নিষেধ ছিলো। তবু আমি গেলাম। অনেক লাল লাল ডিম ছিলো ওইখানে। এত সুন্দর যে আমার ধরে দেখতে ইচ্ছে হলো। আমি চট করে একটা ডিম হাতে নিলাম। কিন্তু তখনই এক ঝাঁক পোকা এসে হাজির হলো। তারা বললো- ছোট পরি, আমাদের ডিম ফিরিয়ে দাও। আমি বললাম- আমি কোনো ডিমই নেইনি। বার বার তারা আমাকে একই কথা বললো আর আমি ডিমটা লুকিয়ে রেখে বার বার মিথ্যেই বলে গেলাম।

একসময় ওরা ওদের পোকা রানীকে ডেকে নিয়ে এলো। সে আমাকে বললো- ছোট পরি তুমি খুব অন্যায় করেছো। না বলে ডিম নিয়েছো আবার মিথ্যেও বলেছো। তোমার ব্যাহারে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই তোমার কঠিন শাস্তি হবে। আজ থেকে তুমি পোকার মত ছোট হয়ে যাবে আর বড়দের রাজ্যে বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারবে না। পোকার রাজ্যই আজ থেকে তোমার দেশ হবে। এভাবে মিথ্যে বলার কারণে আমি ছোট হয়ে গেলাম। তারপর আমি অনেক কাঁদলাম, পোকা রানীর কাছে ক্ষমা চাইলাম, আর কখনই মিথ্যে বলবো না বলে প্রতিজ্ঞা করলাম। তখন তিনি বললেন, যদি তুমি এর পর থেকে সত্য কথা বলো আর কেউ তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাহলে তুমি আবার বড় হয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে পারবে।

এ পর্যন্ত বলেই নীলপরি কাঁদতে শুরু করলো। তার কান্না দেখে আমার খুব কষ্ট হলো। আমি বললাম- কেঁদো না নীলপরি, তুমি খুব সুন্দর আর ভালো। আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। বলে যেই না আমি তার চেখের পানি মুছতে গেলাম হঠাৎ করেই সে বড় হয়ে গেলো। তার নীল ডানা দুটিও অনেক বড় হয়ে ঝিলমিল করতে লাগলো। নীলপরি যে কত্ত সুন্দর তা এবার ভালো করে বুঝলাম।

বড় হতে পেরে সে খুবই খুশি হলো। আমরা অনেকক্ষণ খেলা করলাম। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো আর অনেকগুলো আশ্চর্য নীল ফুল উপহার দিলো। চলে য‍াওয়ার আগে বলে গেলো- তুমি কিন্তু কখনো মিথ্যে বলো না। মিথ্যে বলা অন্যায়। তখন থেকে আমি সবসময় সত্য কথা বলি। নীলপরির কথা আমি আজও ভুলিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।