ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

দুর্গাপূজার আনন্দ

রণজিৎ সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
দুর্গাপূজার আনন্দ

স্কুলে দুর্গাপূজার ছুটি ঘোষণা হলো। ক্লাস শেষে ছুটির ঘণ্টার ঢং ঢং ঢং শব্দ।

শিক্ষার্থীরা ছুটির আনন্দে ক্লাসরুম থেকে বের হচ্ছে। ভিড়ের মধ্যে রমেনের দিকে তাকিয়ে রাসেল বললো, কী রে, পূজার ছুটি পেয়ে খুব খুশি?
মুচকি হেসে রমেন বললো, খুশি হবো না মানে! খুব খুশি। তুই যেমন ঈদের ছুটিতে খুশি হয়েছিলি, আমিও এই ছুটির অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম, কবে দুর্গাপূজার ছুটি পাবো। আজ ছুটি পেলাম, কী যে আনন্দ লাগছে! হুররে!
রাসেল বললো, এবার পূজাতে কোথায় বেড়াতে যাবি?
রমেন, গ্রামে মামার বাড়িতে যাবো।
রাসেল স্কুলব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে বললো, গ্রামে কি শহরের মতো দুর্গাপূজার মজা হয়?
কী যে বলিস। খুব মজা হয়। তুই নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারবি না। তুই যাবি? চল, আমার সঙ্গে?
না রে, এবার না। তবে আমার জন্য নারিকেলের নাড়ু, মুড়ির মোয়া, আরও কতরকম খাবার, সেগুলো নিয়ে আসবি।
আচ্ছা, অবশ্যই নিয়ে আসবো।


এতক্ষণ রমেন আর রাসেলের কথা শুনছিলো মৌ।
ওদেরদিকে তাকিয়ে মৌ বললো, দুর্গাদেবীর চারপাশে লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গনেশ আর ময়ূর-ইঁদুর, সিংহ-সাপ, মহিষাসুর দেখতে খুব ভালো লাগে আমার। একসঙ্গে কতো দেবতা। তারা কী কোনো শক্তির দেবতা?
রমেন বললো, অনন্ত শক্তির প্রতীক মা দুর্গা। লক্ষ্মী ধন, সরস্বতী জ্ঞান, কার্তিক বীরত্ব, গনেশ সাফল্য আর মহিষাসুর-অশুভের প্রতীক।
ও তাই!
রমেন, হ্যাঁ।
পাশ থেকে মৌ বললো, তুমি কি সত্যি গ্রামে মামার বাড়িতে যাবে?
রমেন বললো, এবার যেতেই হবে। তুমিও চলো আমার মামার বাড়িতে।
মৌ, না, প্রতি বছরের মতো এবারও শহরের পূজা দেখবো। শহরের পূজাতে কত্তো মজা হয়।
রমেন বললো, শহরের পূজামণ্ডপ একেকটি একেক রকম। কেউ তৈরি করে তাজমহল, পিরামিড, সাইকেল রেস, নদীর ঢেউ, পাতালপুরি, জালের ওপরে ভাসমান মন্দির। আলো ঝলমলে কতো আশ্চর্য বাতির খেলা। সত্যি অবাক হয়ে যাই। চোখে ধাঁধা লেগে যায় টিপটপ বাতিতে।
ওদের আরেক বন্ধু রমা বললো, শুধু কী আলোর খেলা! দুর্গা প্রতিমার কতো রূপ। যদিও প্রতিমা বেশিরভাগ সময় মাটি দিয়ে তৈরি হয়। মাটি ছাড়াও টিনের ঠাকুর, কাচের ঠাকুর, মোমের ঠাকুর, বিস্কুটের ঠাকুর, হোমিওপ্যাথি শিশির ঠাকুর, শোলার ঠাকুর। কেউবা তৈরি করে কাপড় দিয়ে। এরপর কুমার রঙের তুলিতে রাঙিয়ে জীবন্ত করে তোলেন দুর্গাদেবীকে।


রাসেল বললো, তোদের দুর্গাপূজার আনন্দের সীমা নেই। পাঁচ দিনব্যাপী কতো আনন্দ, কতো মজা। আরতির মধ্য দিয়ে যেনো পূজার পূর্ণতা আসে।

পেছন থেকে পাশা নামে একটি ছেলে বলে উঠলো, শুনেছি গ্রামে দুর্গাপূজার সময় যাত্রাপালা হয়। তোর মামার বাড়িতে কি পূজার সময় যাত্রা হয়?
হ্যাঁ, গত বছর আর আগের বছরও যাত্রা হয়েছে। পূজার প্যান্ডেলের বাইরে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ যাত্রা দেখেছিলাম। এবারও মনে হয় হবে।
রমেন স্কুলে গেটে এসে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশে বললো, সবাইকে দুর্গাপূজার নিমন্ত্রণ রইল।
কেউ কেউ বললো, ধন্যবাদ। তোর বাড়িতে যাওয়া না হলেও আমরা শহরের পূজা দেখতে ঠিকই যাবো।
এরপর স্কুল থেকে বেরিয়ে যে যার মতো বাড়ি চলে গেলো।
রমেন স্কুল থেকে বাসায় ফিরলো। মাকে বললো, আজ স্কুলে দুর্গাপূজার ছুটি হয়েছে। মামার বাড়িতে যাবে না?
মা মুচকি হেসে রমেনের কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগটা নামিয়ে নিতে নিতে বললেন, খুব আনন্দ লাগছে না?
চরকির মতো ঘুরতে লাগলো রমেন। আর বললো, খুব মজা লাগছে মা। চলো আগামীকালই মামাবাড়ি যাই।


মা বললেন, তোমার বাবা অফিস থেকে ফিরলেই আমরা শপিংয়ে যাবো।  
বাবা অফিস থেকে এলেন। বাবা-মার সঙ্গে পূজার শপিংয়ে গেলো রমেন।
পরদিন মায়ের সঙ্গে মামা বাড়িতে ঠিক সময় পৌঁছালো রমেন। কিন্তু তার বাবা আসেননি। উনি পূজার আগে আগে আসবেন। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে রমেন বুঝতে পারলো, অনেক ছেলেমেয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারেনি।
বিষয়টা রমেনকে ভাবালো। সে বাবা নরেশকে ফোনে বললো, বিশ সেট নতুন জামা-কাপড় কিনে আজই কুরিয়ারে পাঠিয়ে দাও বাবা। আর কুরিয়ার না করতে পারলে, তুমি আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসো।
রমেনের বাবা রাজি হলেন। পূজার একদিন আগে রমেনের বাবা জামা-কাপড় নিয়ে হাজির হলেন। মামাতো ভাই পলাশকে নিয়ে রমেন বের হলো। গ্রামে যে ছেলেমেয়েরা নতুন কাপড় কিনতে পারেনি, তাদেরকে ডেকে নিয়ে এলো দুর্গাবাড়ি মন্দিরে। সবাইকে রমেন নতুন জামা-কাপড় দিলো। নতুন জামা কাপড় পেয়ে সবাই তো মহাখুশি। গ্রামের সব ছেলেমেয়ে মিলে দুর্গাপূজার আনন্দ উৎসব করতে লাগলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৫
এসএমএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।