ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভালো পরী কালো পরী | নাজিয়া ফেরদৌস

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
ভালো পরী কালো পরী | নাজিয়া ফেরদৌস ভালো পরী কালো পরী

পৃথিবীতে তখন কোনো দুঃখ ছিল না। সবাই হাসি খুশি থাকত। তখন ছিল ভালো পরীদের রাজত্ব। বিভিন্ন রঙের অপূর্ব সুন্দর সব পরীরা পৃথিবীজুড়ে খেলে বেড়াত। কেউ মিথ্যা বলত না, খারাপ কাজ করত না, সবাই সবাইকে সাহায্য করত। তাদের রানি ছিল সাদা পরী। সে সবাইকে খুশি রাখত। সবার কথা শুনত। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করতো না। তাই সবাই সাদা পরীকে খুব ভালোবাসত।

পরীদের সেই রাজ্যে ছিল এক ধূসর পরী। সে ছিল খুব দুষ্টু আর মিথ্যেবাদী।

তার ছিল অনেক শক্তি। সে মনে মনে সাদা পরীকে হিংসা করত। সে চাইত পরীদের রানি হতে। কিন্তু ধূসর পরী কিছুতেই অন্য পরীদের মন জয় করতে পারল না। একদিন সে জোর করে কয়েকটি পরীকে ধরে নিয়ে গেল। তাদের বলল ধূসর পরীকে রানি বলে মেনে নিতে। পরীরা রাজি হলো না। ধূসর পরী রেগে গিয়ে তাদের ডানা কেটে দিল। পরীরা কাঁদতে কাঁদতে রানির কাছে গেল।

পরী রানি সব শুনে খুবই রেগে গেলেন। ধূসর পরীকে রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হলো। ধূসর পরী তাও দুষ্টুমি ছাড়ল না। সে আরও শক্তি বাড়ানোর জন্য গেল জাদুকরের কাছে। জাদুকর থাকত গভীর জঙ্গলে। সেখানে ছিল অন্ধকার আর ভয়ংকর সব জন্তু। ধূসর পরী জাদুকরকে বলল- তুমি আমাকে কালো জাদুর মন্ত্র দাও নইলে তোমোকে মেরে ফেলব।
জাদুকর বলল- তুমি কালো জাদুর মন্ত্র নিলে পুরো কালো হয়ে যাবে। তোমার পৃথিবী হবে অন্ধকার। তুমি আর কোনোদিনই ভালো পরীদের দেশে ফিরে যেতে পারবে না। কালো পরী বলল- আমি কারও সঙ্গে থাকব না। আমি আমার কালো রাজ্য বানাব।

জাদুকর ধূসর পরীকে পছন্দ না করলেও খুব ভয় পেত। তাই সে কালো জাদুর মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিল। সঙ্গে সঙ্গে ধূসর পরী হয়ে গেল কালো পরী। তার মুখ কালো, হাত পা কালো, ডানাও হয়ে গেল কুচকুচে কালো। ভয়ংকর দেখাতে লাগল তাকে। সে হয়ে গেল কালো পরী। জাদুকর তাকে দেখে ভয়ে দৌড়ে পালাল। আর কালো পরী চলে গেল তার অন্ধকারের পৃথিবীতে। তার সাথে কেউ ছিল না শুধু ছিল অন্ধকার।

কালো পরী এবার তার সঙ্গী খুঁজতে লাগল। একা একা কি আর থাকা যায়? কিন্তু কালো শরীর নিয়ে সে যদি আলোর পৃথিবীতে যায় তবে কেউ তার সঙ্গে আসবে না। এই ভেবে সে একটি ভয়ংকর ফন্দি আঁটল। সে পরীরানির ছদ্মবেশে পরীর দেশে এলো। তখন পরীরা ঝরনার নীল পানিতে খেলছিল, হাসছিল আর সাঁতার কাটছিল। তাদের খুশি দেখে দুষ্টু কালো পরীর রাগ হলো। সে পরীদের কাছে গেল। কালো পরীকে তারা কেউ চিনতেই পারল না।

কালো পরী তাদের বলল, চলো চলো আজ তোমাদের নতুন এক দেশ দেখাতে নিয়ে যাব, সেখানে অনেক আনন্দ। পরীরা ভাবলো তাদের রানিই বুঝি তাদের নিয়ে যেতে চাইছে। তারাও তাই হাসতে হাসতে, নাচতে নাচতে কালো পরীর সঙ্গে চলল। দু’দিন তিন রাত ধরে তারা উড়ল আর উড়ল। যখন পরীরা ক্লান্ত হয়ে গেল তখন ছদ্মবেশী কালো পরী তাদের একটি পাহাড়ের উপরে বসতে বলল। পরীরা ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের উপর ঘুমিয়ে পড়ল। যখন তাদের ঘুম ভাঙল তারা দেখল তাদের শরীর আর ডানা কালো হয়ে গেছে। এবার তারা ছদ্মবেশী কালো পরীর ছলনা বুঝতে পারলো। পরীরা অনেক কাঁদল। কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজে পেল না।

কালো পরী বলল- যদি আমার কথা মতো চলো তবে তোমাদের ছেড়ে দেব। মুক্তি পাওয়ার আশায় তারা কালো পরীর কথা মেনে নিল। তারা কালো পরীর কথা মতো আরো ভালো পরীদের ধরে নিয়ে এল। কিন্তু কালো পরী কথা রাখল না। সে কাউকে ছাড়ল না বরং দুষ্টু হাসি হাসতে লাগলো। পরীরা ভুল বুঝতে পারল আর কাঁদতে লাগল। এদিকে পরী রানি পরীদের খুঁজে না পেয়ে চিন্তায় পড়লেন। বাজপাখি তাকে পরীদের কষ্টের খবর এনে দিল।

পরী রানি দেখলেন কালো পরী অনেক পরীকেই বন্দি করেছে। তাদের উদ্ধার করতে হবে। যেসব ভালো পরীদের কালো পরী নিয়ে যেতে পারেনি তাদের আর পাখিদের নিয়ে পরী রানি যুদ্ধের জন্য তৈরি হলেন। কালো পরীর সঙ্গে ভালো পরীদের ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হল। কালো পরীর শক্তির কাছে ভালো পরীরা যখন প্রায় হেরে যাচ্ছিল তখন তাদের সাহায্য করতে এলো জাদুকর। সবাই মিলে ভালোর জন্য যুদ্ধ করলো। অনেক পরীর ডানা ভেঙে গেল, অনেকেই আহত হল। অবশেষে যুদ্ধে কালো পরী হেরে গেল। ভালো পরীদের উদ্ধার করে পরীরানি দেশে ফিরে এলেন। সবাই একসঙ্গে সুখে রইল। শুধু কালো পরীর দুষ্টু বুদ্ধির জন্য কেউ তার সাথে রইল না।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।