ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বিল্টু (পর্ব-৩) | গৌতম দাশ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৭
বিল্টু (পর্ব-৩) | গৌতম দাশ     বিল্টু

[পূর্বপ্রকাশের পর]
বিল্টু হাসতে লাগল, সিধা নয় রে বেক্কল, স্নিগ্ধা। আর আমিও বুঝি নাই রে দোস্ত। বড়লোকের বড়লোকি নাম। চল, আজ এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। এর মাঝে স্নিগ্ধা আরও সময় নষ্ট করে দিলো। খাজা বললো, দেখলি দোস্ত মেয়েটা কি বললো। এতোসব ওর ভালো লাগে না। ইস! আমি যদি ওর মতো হতাম তবে টেবিলের সব খাবার খেয়ে ফেলতাম। আর সারাদিন কম্পিউটার টিপাইতাম।

মকু বলল, হ্যাঁ রে দোস্ত। ওর আছে বলেই ভালো লাগে না।

আমাদের নেই তাই আমরা আফসোস করি। বিল্টু বলল, চল চল। তাড়াতাড়ি চল। রহিম বলল, ওই দেখ শমসের আসছে। চল লুকাই।

শমসের খান বস্তির মাতবর। ওর কথার উপরে কেউ কিছু বলতে পারে না। সবাই ভিতরে ভিতরে জানে সে দুই নম্বর ব্যবসা করে। কিন্তু কেউই মুখে বলার সাহস পায় না। ও একটা বড় গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত।

শমসেরকে বিল্টুরা খুব ভয় পায়। দেখলেই ছুটে পালায় বা লুকিয়ে যায়।

আজ বিল্টুরা বেজায় খুশি। দেরি করে বেরুলেও অনেক বেশি কাগজ পেয়েছে। বস্তা ফাটিয়ে ভরেছে। কাগজগুলো বিক্রি করে একটু বেশি টাকা পেলো। খুশিমনে তারা ফিরে এলো বস্তিতে।

বিকেল হয়ে গেছে। বিল্টু হাড়ি থেকে ভাত বেড়ে খেয়ে নিলো। প্রতিদিনই তার মা কাজে যাওয়ার আগে ভাত রেঁধে রেখে যায়। খেয়ে দেয়ে বিল্টু আবার মকুদের সঙ্গে যোগ দিলো। খাজার খুপড়িতে বসে লুডু খেলতে লাগলো ওরা। অনেকক্ষণ লুডু খেলার পর সন্ধ্যার সময় খুপড়িতে ফিরে এলো বিল্টু। দেখল মা শুয়ে আছে। আর কেমন যেন আর্তনাদ করছে। বিল্টু মায়ের কাছে বসে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে মা?

-কিছু হয়নি রে। পেটের ভিতর কেমন যেন ব্যথা হচ্ছে।

-তাহলে লবণ-পানি গরম করে দিই মা?

-দে তো।

বিল্টু লবণ-পানি গরম করে বোতলে ভরে এনে দিলো। ওর মা পেটের উপর বোতলটা ধরে রাখলো।

-এখন কেমন লাগছে?

-হ্যাঁ। একটু ভালো লাগছে।

-মাথা টিপে দেব?

-দে বাবা। একটু দে।

বিল্টু মায়ের মাথা টিপতে লাগলো। কিন্তু পেটের ব্যথাটা কমছেই না। কমবে কি করে মাথা টিপলে কি আর পেটের ব্যথা কমে? বরং যত সময় যাচ্ছে ততই বাড়তে লাগলো। একসময় ব্যথাটা অসহ্য হয়ে উঠলো। চিৎকার করতে লাগলো বিল্টুর মা। বিল্টু এখন কি করবে বুঝতে পারলো না। সোবান চাচাকে ডেকে আনলো। সোবান চাচাও কিছু বুঝতে পারলো না। বললো, ফার্মেসি থেকে তোর ডাক্তার চাচাকে নিয়ে আয়।

বিল্টু ডাক্তার চাচাকে নিয়ে এলো। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে চলে গেলো।   মাকে ওষুধ খাওয়ালো বিল্টু। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। সারারাত এভাবেই চিৎকার-আর্তনাদে কাটলো বিল্টুর মায়ের। বিল্টু কি করবে বুঝতে পারছে না। মায়ের এতো কষ্ট সহ্য হচ্ছে না বিল্টুর।

সকাল হলো। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। সোবান চাচা বিল্টুকে বললো, তোর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যা। আমিও আসছি তোর সঙ্গে।

একটা ভ্যানে করে বিল্টু মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। অনেকক্ষণ পর ডক্তার এলো। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললো, এটা অ্যাপেন্ডিসের সমস্যা। দ্রুত অপারেশন করতে হবে।

-তাহলে অপারেশন করুন না, ডাক্তার। বিল্টু বললো।

-ঠিক আছে। ক্যাশবক্সে বিশ হাজার টাকা জমা দাও। তারপর অপারেশন হবে।

একথা শোনার পর বিল্টুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। দুচোখ ঝাপসা হয়ে এলো তার। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ডাক্তার বাবু, আমরা গরিব। বস্তিতে থাকি। এতোটাকা কোথায় পাব!

-দেখ, আমার কিছু করার নেই। আর এটা প্রাইভেট হাসপাতাল। এখানে টাকা লাগবেই। তুমি না হয় সরকারি হাসপাতালে যাও।

চলবে...

****
বিল্টু (পর্ব-২) | গৌতম দাশ
****বিল্টু (পর্ব-১) | গৌতম দাশ

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।