অটোগ্রাফ সংগ্রহের শখ আমার ছোটবেলার। অটোগ্রাফ সংগ্রহের এ সুযোগ হয়েছিল দৈনিক সংবাদপত্র পড়ার মাধ্যমে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংবাদগুলো পড়ে শোনানোর সময় সংবাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমার বাবা ধৈর্য সহকারে সসেব বিষয় সম্পর্কে বলতেন। তখন আমার মনে আকাঙ্ক্ষা জাগত কিভাবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবো।

সর্বপ্রথম আমার চিঠির সাড়া দিয়ে অটোগ্রাফ ও চিঠি পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতি (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) স্যার মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান। পরে পত্র দিয়েছিলেন, আমেরিকার নিহত প্রেসিডেন্ট জন. এফ. কেনেডি, প্রখ্যাত নিগ্রো গায়িকা ও মানবাধিকার কর্মী মিস মেরাইন এনডারসন, নিগ্রো নেতা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. রালপছ জে. বানচে, বৃটিশ দার্শনিক ও সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লর্ড বার্ট্রান্ড রাসেল, প্রধানমন্ত্রী লর্ড হেরেল্ড উলসন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যারিংটন, রাষ্ট্রদূত ও রাজনীতিবিদ স্যার রবার্ট জ্যাকসন, কম্বোডিয়ার রাজা প্রিন্স নরোদম সিহানুক।
অটোগ্রাফসহ আরো চিঠি পাঠিয়েছিলেন-ভারতের রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী কে এন কাটজু, শিখনেতা মাস্টার তারা সিংহ, প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর ও মোরারজি দেশাই। এছাড়া প্রথম সেনাপতি জেনারেল কে. এম কারিয়াপপা, শেরে কাশ্মীর শেখ মো. আব্দুল্লাহ, কমিউনস্টি নেতা ই. এ. এস. নামবরিপাত, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট র্ফাদন্যিান্ড ই. মার্কোস, পাকিস্তানের মিস ফাতেমা জিন্নাহ্ , নবাবজাদা নাসরুল্লাহ খান, প্রধান বিচারপতি এম. আর কায়ানি, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জে. এম আজম খান, সাংবাদিক ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত শোয়েব কোরেশী, প্রখ্যাত কবি ফয়েজ আহম্মেদ ফয়েজ, সঙ্গীতশিল্পী নূরজাহান বেগম, ক্রিকেটার এমরান খান, সেেনগালের কবি ও প্রেসিডেন্ট লিওপোল্ড সেদার সেন্ গোর, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ্ওয়াটলার নাশ প্রমুখ।

অটোগ্রাফ সংগ্রহের নেশা আমাকে সারাক্ষণ তাড়িত করতো। অটোগ্রাফ সংগ্রহের আনন্দদায়ক হাজারো স্মৃতি রয়েছে আমার। ১৯৫৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশেষ ট্রেনে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, শেখ মুজিবুর রহমান সকাল ৯টায় সান্তাহার রেলওয়ে এসিেছলেন। তখন আমি সবে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। নিরাপত্তা কড়াকড়ির মাঝেও ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় ঢুকে পড়ি অটোগ্রাফের জন্য। সেদিন প্রথম অটোগ্রাফের জন্য অনুরোধ জানালাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। তখন তিনি পায়জামা ও গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তিনি ভাঙা বাংলায় আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন। পরে নিজ হাতে তার সুটকেস থেকে কলম বের করে আমার খাতায় অটোগ্রাফ দেন।

অসুস্থ দক্ষিণ আফ্রিকার ড. পি. বি ব্রালাইবার্ক-এর অটোগ্রাফ সংগ্রহের সুযোগ হয়েছিল। মৃত্যুর এক বছর পর তাঁর স্ত্রী ব্যাংক চেকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলেন। তবে চিঠির উত্তর পাঠাতে সবচে’ দেরি করেন কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হারবার্ট হুবারকে বেশ কয়েকবার পত্র পাঠাবার পর ১৯৬১ সালের ৬ আগস্ট তাঁর ৮৭তম জন্মবার্ষিকীর স্পেশাল স্মারক গ্লোব ডেমোক্রেট সানডে ম্যাগাজিনের প্রথম পৃষ্ঠায় অটোগ্রাফ পাঠিয়েছেন ম্যাগাজিনসহ।
নোবেল পুরস্কার বিজয়িণীদের মধ্যে ৪০ জনের অধিক অটোগ্রাফ ও পত্র সংগ্রহ করেছি। তন্মধ্যে দু’বার নোবেল বিজয়ী ড. এল পাউলিং, সাহিত্যে ষ্টেন বেগ, মেডিসিনে জোনসস সলক, সাহিত্যে মিস পার্ল এস বার্ক, ফ্রান্সের রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী আন্দ্রে মালরোর, গোয়েতেমালার গণতন্ত্রকামী নেতা ও সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সেনোর মিজুয়েল এ্যাঞ্জেল অসটোরিয়াস, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিব্বতের আধ্যাত্মকি নেতা দালাই লামা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বৃটিশ লেবার পার্টির নেতা ফিলিপ নোয়েল বেকার, বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী স্যার জন কক ক্রোফট ও গুয়েতেমালার শান্তিতে নোবেল বিজয়ী নারী রিগোবারটো ম্যানচু।
সংগ্রহ করেছি জার্মানীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ৫০টির মতো অটোগ্রাফ। তাদের মধ্যে জার্মানীর প্রথম প্রেসিডেন্ট ড. থিওডর হিউস, নোবেল পুরস্কার জয়ী ড. ওটো হ্যানরিজ ওয়ারবার্ক , ড. উইলী ব্র্যান্ড, আন্তর্জাতিক প্রাণি বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. বারহার্ড গ্রীজিমেক, প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট এইচ লোচনার, প্রখ্যাত গায়ক আচার্য ম্যানফ্রেড এম, জুনয়াস, চ্যাঞ্চেলর ড. এ কে এডিনেওয়ার প্রমুখ।
১৯৮৮ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিজয়ী ১৪ জন শ্রীলঙ্কার খোলোয়াড় ও ১৯৯৮ সালের বিজয়ী ১৬ জার্মান খেলোয়াড়ের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।
আমার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৪ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার খটেশ্বর গ্রামে।
১৯৭২-৭৬ পর্যন্ত নিখিল বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৭৭-৮০ সাল পর্যন্ত নওগাঁ সাংবাদিক সমিতি ও নওগাঁ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। দীর্ঘ সময় নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছি জাতীয় ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকায় । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন আমার বড় ভাই মো. আনোয়ারুল আজীম। অপর ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০২ সালে মারা যান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে রক্তাক্ত বাংলাদেশের সেতুবন্ধন তৈররি জন্যই আজীবন কাজ করেছি অটোগ্রাফ সংগ্রহে। সংগ্রহ করা এসব অটোগ্রাফ প্রদর্শনীর মাধমে অর্থ সংগ্রহ করে তা দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করতে চাই। সেই সাথে ইচ্ছা রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে একটি অটোগ্রাফ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার এবং অটোগ্রাফ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লেখার। আমার এ প্রচেষ্টায় সরকার ও দেশি-বিদেশি সংস্থার সার্বিক সহায়তা কামনা করছি।