ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা: নাটোরে শ্যালক-দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪
দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা: নাটোরে শ্যালক-দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন

নাটোর: নাটোরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার অপরাধে মো. আসাদুল ইসলাম (৩২) ও মো. টুটুল আলী (২৫) নামে দুই ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 

এছাড়া একই মামলায় ভিন্ন দুটি ধারায় আরও চার বছর করে কারাদণ্ডসহ ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নাটোরের অতিরিক্ত  জেলা ও দায়রা জজ মোছা. কামরুন্নাহার বেগম এই রায় ঘোষণা করেন। এসময় আসামিরা  আদালতে উপস্থিতি ছিলেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন সম্পর্কে শ্যালক ও দুলাভাই। আসাদুল ইসলাম (দুলাভাই) জেলার লালপুর উপজেলার হাবিবপুর এলাকার মো. ছানোয়ার হোসেনের ছেলে এবং তার শ্যালক মো. টুটুল আলী একই উপজেলার আড়বাব মধ্যপাড়া এলাকার মো. মানিক আলীর ছেলে।

নাটোর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জানান,  ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর লালপুরের ডহরশৈলা এলাকার একটি লিচু বাগান থেকে একটি অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেসময় মৃত ওই নারীর গলায় কালচে জখম ও আঁচরের দাগ ছিল। এ ঘটনায় লালপুর অর্জুনপুর বরমহাটির বিটের গ্রাম পুলিশ শ্রী রতন কুমার বাদী হয়ে লালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ।  নিহত ওই নারী ছিলেন রাজশাহীর বাঘার সুলতানপুর এলাকার মো. জামাত আলী মেয়ে এবং লালপুরের হাবিবপুর এলাকার মো. ইসমাইলের স্ত্রী।  

তিনি বলেন, অভিযোগপত্রের তথ্যে জানা যায়, ঘটনার আরও ১২ বছর আগে আসামি টুটুলের বোন মোছা. সোনিয়া খাতুনের সঙ্গে আসাদুলের বিয়ে হয়। অন্যদিকে আসাদুল ইসলাম ও লাকি খাতুনের (নিহত) বাড়ি একই পাশাপাশি হওয়ায় তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। ঘটনার ৬ বছরে লাকিকে ৩ বার বিয়ে করেন আসাদুল। কিন্তু দুজনেরই পূর্বের স্বামী-সন্তান থাকায় স্থানীয় মধ্যস্থতায় তিনবারই তালাক দিতে হয় আসাদুলকে। এরপর ঘটনার ৬ মাস আগে লাকিকে আবার পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন আসাদুল। সেখান থেকে দুজনেই ইশ্বরদী ইপিজেডে চাকরি শুরু করেন। আর ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে আবার দুজনেই নিজের পূর্বের স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের সাথে কথা বলে পূর্বের মতো ঘর-সংসার করার প্রতিশ্রুতি পান। এ অবস্থায় ২০২০ সালের ২ অক্টোবর আসাদুল ও লাকি খাতুন নিজ নিজ পরিবারে ফিরে যান। চারদিন পরে আবার লাকি খাতুনকে পালিয়ে ঈশ্বরদী নিয়ে যায় আসাদুল ইসলাম। অন্যদিকে, প্রথম পক্ষের শ্যালক টুটুল আলীকে মাগুরা থেকে ফোন করে ডেকে এনে সন্ধ্যার পরে লাকিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।  

তিনি আরও বলেন, এরপর লাকিকে নিয়ে ডহরশৈলা থেকে শ্রীরামগাড়ী রেলগেটগামী রাস্তার পাশে নিয়ে যায় আসাদুল ও টুটুল। সেসময় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে লোকজন না থাকায় তারা গলা চেপে শ্বাসরোধ করে লাকিকে হত্যা করে। ঘটনার সময় টুটুল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লাকির দুই হাত চেপে ধরে রাখে। পরে লাকি খাতুন মারা গেলে তার মরদেহ পাশের লিচু বাগানে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। পরে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনসহ লালপুর থানায় মামলা দায়ের হয়।  

পিপি সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ফজলুল হক এ মামলাটি তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৯ জুন আদালতে আসামি আসাদুল ও টুটুলের নাম উল্লেখ করে এবং আরেক গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন আসামি পাবনার বক্তারপুরের মো. আব্দুল প্রামাণিকের ছেলে মো. জাইদুল আলীকে (৪০) অব্যাহতি চেয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বিজ্ঞ বিচারক রোববার বিকেলে এ রায় ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।