ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৬ বছরে শেষ হয়নি বিচার, জামিন পাচ্ছেন আসামিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৬ বছরে শেষ হয়নি বিচার, জামিন পাচ্ছেন আসামিরা ফাইল ছবি

ঢাকা: পুরান ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ বছর পেরিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ এ ট্র্যাজেডি।

যেখানে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মারা যান ৭৪ জন।

প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও শেখ হাসিনা এ হত্যাকাণ্ডের গ্রহণযোগ্য বিচার করতে পারেনি। নিহত সেনা পরিবার বা বিডিআর কেউই বিচার প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নয়। এর মধ্যেও হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে যে দুটি মামলা হয়েছিল তারও চূড়ান্ত বিচার শেষ হয়নি। হত্যা মামলা বিচারিক আদালতে রায়ের পর হাইকোর্ট পেরিয়ে এখন আপিল বিভাগে আছে। তবে বিস্ফোরক মামলাটি ১৬ বছরেও আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়েই।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে বিচারাধীন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ মামলা নতুন মোড় নেয়। গত ১৯ জানুয়ারি কারাগারে থাকা ১৭৮ জওয়ান বিচারিক আদালত থেকে জামিন পান। এরপর তারা কারামুক্ত হয়েছেন। যেসব আসামি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন কিন্তু উচ্চ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়নি এবং বিস্ফোরক মামলায় কোনো সাক্ষী তার নাম বলেননি প্রথম দফায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

এ মামলায় সবশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি একজন সাক্ষ্য দেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। এছাড়া কারাগারে থাকা আরও অন্তত ৪৬২ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ পরবর্তী ধার্য তারিখেই জামিন শুনানির কথা রয়েছে।  

এ মামলার বিচারের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন বলেন, চার্জশিটে ১ হাজার ১৪৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

আরেক প্রসিকিউটর আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে স্বৈরাচারের বীজ নিহিত ছিল। স্বৈরাচার, স্বৈরশাসন এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরদের হত্যা করেছিল। দেশের চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের এক জায়গায় করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ নিহিত ছিল।

তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য কমিশন গঠন হয়েছে। পুনরায় এ মামলা তদন্তে গেলে জটিলতা তৈরি হবে। আমরা চাইবো সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হোক। সম্পূরক চার্জশিটে দিলে যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করা যাবে। গত ১৬ বছর ধরে মামলার বিচার বিলম্বিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, বিচার আর বিলম্বিত হবে না। সাক্ষী হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত চালিয়ে যাবো।

অপরদিকে মামলার এ বিলম্বে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদও। তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তবে ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়েনি। ভিকটিমদের পরিবারও বলেছে ন্যায়বিচার হয়নি। কারণ প্রকৃত আসামিরা বিচারের আওতায় আসেনি। যারা মামলার আসামি তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। কাজেই আশা করছি, তারা চূড়ান্ত বিচারে খালাস পাবেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) এর বিদ্রোহী জওয়ানরা সংস্থাটির সদরদপ্তর রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ ব্যক্তি। এ বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্টের আপিলের রায়ও হয়ে যায়।

অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছে। মামলাটি হত্যা মামলার সঙ্গে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করলেও বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি। এক পর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
কেআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।