ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্ত সড়ক বদলে দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দৃশ্যপট

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
সীমান্ত সড়ক বদলে দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দৃশ্যপট

রাঙামাটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের অংশ হিসেবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের  ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ।

এ কারণে পাহাড়ি জনপদগুলোতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।  

পুরো সড়ক নির্মাণ শেষ হলে ভারত-বাংলাদেশের যোগাযোগের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। দুর্গম হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক সময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বলা হলেও বর্তমান সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নবযুগের সূচনা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সড়ক যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের দৃশ্যপট বদলে দিতে বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের সূচনা করে। সীমান্ত সড়ককে ঘিরে মানুষ এখন নতুনভাবে স্বপ্ন বুনছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তি, পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তনে সীমান্ত সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। সীমান্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর প্রকল্পটির আরও ১৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হবে। অবশিষ্ট ৯০ কিলোমিটারের কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা যেমন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন, তেমনি বর্তমান সরকারের এমন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ডুলু বাগান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মায়াবিনী চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্ত সড়ক হওয়ায় আমরা অনায়সে রাঙামাটি, চট্টগ্রামে দ্রুত যেতে পারব। বিদ্যুৎ পাব, স্কুল-কলেজ হবে। আমরা খুব খুশি।

একই এলাকার বাসিন্দা বলি চন্দ্র ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন সড়ক তৈরি করার জন্য।

রাজস্থলী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজগর আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে উৎপাদিত ফসল রাজস্থলী উপজেলা সদরে নিয়ে আসতে তিনদিন সময় লাগতো। এখন সীমান্ত সড়ক হয়ে যাওয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কৃষকরা তাদের ফসল রাজস্থলী নিয়ে আসতে পারছেন। এটা সরকারের বড় সফলতা।

২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম মুহায়মিন বিল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী এ সীমান্ত সড়ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা আরও বলেন, সীমান্ত সড়কের পুরো কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে পার্বত্যাঞ্চল আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতিতে পার্বত্যাঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করবে।

তিনি বলেন, এখানে নেটওয়ার্ক নেই, বিদ্যুৎ নেই, তীব্র পানির সংকট, সন্ত্রাসীদের অভয়রাণ্য। পুরো সড়কটি হলে এখানে বিদ্যুৎ চলে আসবে, নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকবে না, পানি সংকট দূর হয়ে যাবে এবং সন্ত্রাসীরাও পালিয়ে যাবে। পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।