ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইল চুরির অভিযোগে যুবককে তুলে নিয়ে ‘মিথ্যা মামলায়’ ফাঁসালো পুলিশ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
মোবাইল চুরির অভিযোগে যুবককে তুলে নিয়ে ‘মিথ্যা মামলায়’ ফাঁসালো পুলিশ  অভিযুক্ত পল্লবী থানার এসআই উজ্জ্বল সরকার ও সোলায়মানকে তুলে নেওয়ার সময়ের দৃশ্য

ঢাকা: মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে মো. সোলায়মান  নামের এক যুবককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল সরকারের বিরুদ্ধে।  

এমন অভিযোগ এনেছেন সোলায়মানের স্ত্রী নাছিমা।

তিনি বলেন, একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে ওই যুবককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পুলিশের ওপর হামলার মামলা দেন এসআই উজ্জ্বল।  

ভুক্তভোগী সোলায়মান মিরপুর ১২ নম্বর বেগুনটিলার বাসিন্দা।  

রোববার (১২ জানুয়ারি) এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সোলায়মানের স্ত্রী নাছিমা আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।     

সোলায়মানের স্ত্রী নাছিমা বলেন, পল্লবী  থানার এসআই উজ্জ্বলের একজন সোর্স রয়েছেন, তার নাম সুজন। গত ২৭  জানুয়ারি সুজনের ভাই রাজু ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মিলন নামের এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন চুরি করে আমার স্বামীর কাছে বিক্রি  করেন। ওই দিন রাতে আমার স্বামীর বন্ধু রনি আমাাদের  বাসায় এসে জানায় আমরা যে মোবাইলটি কিনেছি তা একটি চোরাই মোবাইল। এই  চোরাই মোবাইল ফোনের জন্য রাজুকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় আটক করা হয়েছে। মোবাইল সেটটি ফেরত দিলে পুলিশ রাজুকে ছেড়ে দেবে। এ কথা শুনে আমরা মোবাইল সেটটি ফেরত দিই। ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ রাজুকে ছেড়ে দেয়। ঘটনার ২ দিন পর ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এসআই উজ্জ্বল সিভিল ড্রেসে মিরপুর ১২ নম্বর বেগুনটিলায় এসে আমার স্বামীর খোঁজ করেন। এ সময় আমার স্বামী বাসায় ছিলেন।  

তিনি বলেন, আমার স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে একটি সবজির ভ্যানে গাড়িতে উঠানো হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে এসআই উজ্জ্বল মোবাইল ফোন চুরির কথা বলেন তাকে আটক করেন। অনেকে মোবাইল ফোনে এ ঘটনার  ভিডিও  ধারন করলে উজ্জ্বল তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তা ডিলিট করে দেন। পুলিশ  আমার স্বামীকে অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাতেই তাকে পল্লবী থানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ওই দিন রাতে পল্লবী থানায় এসআই উজ্জলের সঙ্গে দেখা করি। তার কাছে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ দেখতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণসহ আমাকেও জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়। আমি অনুনয় বিনয় করলে তিনি আমার স্বামীর মুক্তি বাবাদ ২ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামীকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার মামলা দেওয়া হয়।  

অভিযোগে নাছিমা আরও বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি দিনের বেলায় কালশীর ২২তলা গার্মেন্টের সামনে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। ওইদিন একই ঘটনায় পল্লবী থানায় দুটি মামলা হয়।  একটি মামলার বাদী কাজী নাজমুল ইসলাম। তিনি ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। একই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ওই ৮ জনসহ আমার স্বামীকে আসামি দেখিয়ে ৯ জনের নামে মামলা করেন।  

সোলায়মান কেন এসআই উজ্জ্বরের রোষানলে পড়লেন প্রশ্নে নাছিমা বলেন, কিছুদিন আগে এসআই উজ্জ্বল আমার স্বামীকে তার সোর্স হওয়ার প্রস্তাব দেয়। আর যেন তাকে বড় বড় কাজ দেয়। আমার স্বামী এ প্রস্তাব মেনে নেয়নি।  এজন্য তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে পুলিশ। মোবাইল চুরির কথা বলে তাকে পুলিশের উপর হামলার মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন সোলায়মান যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে সেই মামলা দেওয়া হোক। পুলিশ কেন মিথ্যা মামলা দেবে?   

এ ঘটনার একাধিক ভিডিও বাংলানিউজের হাতে এসেছে।  

ভিডিও তে দেখা যায়, সোলায়মানকে ধরতে সিভিল ড্রেসে ঘটনাস্থলে হাজির হন এসআই উজ্জ্বল। আটকের এক পর্যায়ে স্থানীয়রা বাধা দিলে মোবাইল চুরির কথা বলে সোলায়মানকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পল্লবী থানার ওই এসআই।  

পল্লবী থানার (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ ইসলাম জানান, সোলায়মান একটা চোর। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার ঘটানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
এমএমআই/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।