ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দেড়শ গ্রাম মাংসও কেনা যাবে শামছুদ্দীনের দোকান থেকে 

  শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
দেড়শ গ্রাম মাংসও কেনা যাবে শামছুদ্দীনের দোকান থেকে 

জয়পুরহাট: সারা দেশের মতো জয়পুরহাটের মুরগির বাজারেও মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১শ টাকা। এতে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ২৪০ টাকা, সোনালী ও লেয়ার মুরগি কেজিপ্রতি ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষেরা যেন ভিড়তেই পারছেন না।
 
তবে আশার কথা হলো জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ব্যতিক্রমী কয়েকটি দোকান পরিচালিত হচ্ছে।
 
উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ফুলদিঘী বাজারে ষাটোর্ধ্ব শামছুদ্দীন সরদার সমাজের একেবারেই নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য মুরগির মাংস বিক্রির একটি দোকান খুলেছেন। যেখানে চাহিদা অনুযায়ী দেড়শ গ্রাম থেকে আড়াইশ গ্রাম, আধা কেজি ও এক কেজি ওজনের কাটা মুরগির মাংস কিনতে পারছেন।
 
অর্থাভাবে পুরো মুরগি যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, অথচ মাংস খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে-মূলত তারাই ‘প্রাণিসম্পদ পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র’ নামের এই দোকানের ক্রেতা।
 
আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান। কিছুদিন আগে দুর্ঘটনায় তার একটি পা পঙ্গু হয়ে গেছে। ঠিকমতো আর কাজ করতে পারেন না। অভাবের সংসার হলেও অনেকদিন ধরেই গরুর মাংস কেনা তো দূরের কথা, একটি মুরগিও কিনতে পারেননি। তাই তিনি আজ ফুলদিঘী বাজারে শামছুদ্দীন সরদারের দোকানে এসেছেন।
 
কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখানে গরিব মানুষদের কথা চিন্তা করে শামছুদ্দীন সরদার দেড়শ গ্রাম থেকে আড়াইশ গ্রাম, হাফ কেজি, এক কেজিসহ যে যার চাহিদা মতো মাংস কিনতে পারেন। তাই তিনিও আজ হাফ কেজি মাংস কিনতে এসেছেন।
 

শিবপুর গ্রামের সখিনা বেগম, যিনি অন্যের কাছে হাত পেতেই সংসার চালান। তিনিও আজ এই দোকানে এসেছেন। আজ তিনি মাত্র এক পোয়া মাংস কিনে বাড়ি ফিরলেন।
 
এভাবেই শামছুদ্দীনের মুরগির দোকানে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়তগরিব মানুষেরা মুরগির মাংস সংগ্রহ করতে আসেন। তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দেন না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
 
মানবিক দোকানি শামছুদ্দীন সরদার জানান, দ্রব্যমূল্যের বাজারে সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। যেহেতু আমিও একজন গরিব মানুষ, তাই নিম্ন আয়ের মানুষদের সুবিধার জন্যই এই দোকানটি চালু করেছি। আর এই ব্যবসায় সহযোগিতা করে থাকেন আমার স্ত্রী ও এক নাতি। যতদিন বেঁচে আছি, গরিব ও অসহায় মানুষদের সুবিধার্থে এই দোকানটি পরিচালনা করবো ইনশাল্লাহ।
 
স্থানীয় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম বলেন, বর্তমান সময়ে ছোট পর্যায়ের ব্যবসায়ী শামছুদ্দীনের এমন মানবিক উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এই ধরনের দোকান বিভিন্ন এলাকায় পরিচালনা হলে স্বল্প আয়ের মানুষেরা বেশ উপকৃত হবেন।
 
এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসো’র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাব্বির হোসেন বলেন, নিম্নবিত্ত ও গরিব অসহায় মানুষের আমিষের চাহিদাপূরণ এবং স্থানীয়ভাবে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যেই এমন দোকান তৈরিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে পিকেএসএফ। যা এসো সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন সংস্থা এমন দোকান পরিচালনা করছেন।
 
জানা যায়, পিকেএসএফর আর্থিক সহযোগিতায় ক্ষেতলাল উপজেলার শামছুদ্দীন সরদারের মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করে সারা দেশের পাঁচটি জেলায় এমন দোকান পরিচালিত হচ্ছে। যে সব দোকানে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ক্রেতাদের হাতে মাংস তুলে দেওয়া হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।