ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ বলে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট বলে জানিয়েছে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন।

শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে তারা যে দুটি সংগঠন ও ব্যক্তিদের সূত্র উল্লেখ করেছে তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয় এবং অনিবন্ধিত। এ দুটি সংগঠনের একটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের সমাবেশে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছিল। যদিও সেই প্রতিবেদনের সত্যতা তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে প্রতিবেদনে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা যথাযথ নয় বলে আমরা মনে করছি। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান একজন প্রধানমন্ত্রীকে যেটুকু ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী তার আলোকেই তা ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যোগ্যতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য তারা করতে পারে না। এ ধরনের মন্তব্য জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

তিনি বলেন, প্রতিবেদনে গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ বলে যে মন্তব্য করেছে তাতে আমাদের মনে হয়েছে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রশ্ন পৃথিবীর কোন দেশে ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র রয়েছে তা তারা বলতে পারবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গা বাধিয়েছিলেন এবং কয়টি প্রাণ ঝরে গেছে সে ইতিহাস বিশ্ববাসীর জানা রয়েছে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র শতভাগ ত্রুটিমুক্ত বলছি না, কিন্তু গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের সচেতন নাগরিকরা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত সোচ্চার রয়েছে। যেমন বেশকিছু নাগরিক সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ‘নির্বাচন কমিশন আইন’ করেছে যা ইতোপূর্বে ছিল না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে বেশ কিছু নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতা প্রমাণও করেছে।

তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বিষয়ে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ আমরা লক্ষ্য করেছি, সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও টেলিভিশনে টক-শোতে সরকার বিরোধী সমালোচনাসহ অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত ও প্রকাশ হচ্ছে। এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করছি না এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনটির আপত্তিকর ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর হলেও বিস্ময়করভাবে এতে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়টি ২০১৮ বা ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক হতে পারত। চার বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নতোলায় বিষয়টি স্বভাবতই সাধারণ নাগরিকদের কাছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে হচ্ছে।

প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে প্রশাসনের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে আমরা আরও দায়িত্বশীল প্রতিবেদন প্রত্যাশা করি। এছাড়া সব রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি এই রাষ্ট্রটির সমান মনোযোগ থাকা উচিত। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল এবং তা স্পষ্টতই জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী। যুক্তরাষ্ট্রের এ জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে জানিয়ে সত্যতা যাচাই ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ২০২০-২০২১ সালের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ২০২২ সালেও আগের প্রতিবেদনের একই মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের শ্রম অধিকার বিষয়ে উল্লিখিত ইস্যুতে সরকারের বিবেচনা করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করে সার্ফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এসজেএ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।