ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কোটালীপাড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
কোটালীপাড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চিন্ময় বসু নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় অভিভাবকসহ এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তারা ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেছেন।

চিন্ময় বসু কোটালীপাড়া উপজেলার ৯৭ নম্বর কান্দি বানিয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের চন্দ্রকান্ত বসুর ছেলে।

জানা গেছে, চিন্ময় বসু নামে ওই শিক্ষক প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন ছাত্রীকে কাছে ডেকে নিয়ে তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এ ঘটনা ওই সব ছাত্রী তাদের অভিভাবকদের জানালে তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানাকে জানায়। প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার শিক্ষক চিন্ময় বসুকে রক্ষার জন্য তাড়িঘড়ি করে তাকে তিন দিনের ছুটি দিয়ে দেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক চিন্ময় বসুর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষক চিন্ময় বসু এই বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ওই সব ছাত্রীর অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না বলে জানিয়েছেন।

পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রী বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু প্রতিদিন পাঠদানের সময় আমাদের এক এক জনকে কাছে ডেকে নিয়ে আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এ কারণে আমরা কয়েকজন ছাত্রী পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। স্যার সেখানে গিয়েও আমাদের জড়িয়ে ধরতেন। স্যারের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুই/তিনজন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছিলো না। তার কাছে বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে সে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা আমাকে জানায়। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানাই। তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শিক্ষক চিন্ময় বসুকে ছুটি দেন। ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বদলি না করা পর্যন্ত আমার মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাবো না।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিদ্যালয়সহ শিক্ষক চিন্ময় বসুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার বলেন, বিষয়টি আমি বিভিন্ন অভিভাবকদের কাছ থেকে জানার পরে শিক্ষক চিন্ময় বসুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। শিক্ষক চিন্ময় বসু ঘটনাটি মিথ্যা বলে আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ছাত্রীদের আদর করে পড়া বুঝিয়ে দিতেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।

চিন্ময় বসু আমার কাছে ছুটির আবেদন করলে গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) থেকে আমি তাকে তিন দিনের ছুটি দেই।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসু এখানে যোগদানের পর থেকেই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের গায়ে কারণে অকারণে হাত দিতেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা প্রধান শিক্ষক শিখা হালদারকে জানালেও তিনি চিন্ময় বসুর বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে তাকে রক্ষার জন্য প্রধান শিক্ষক শিখা হালদার তাকে তিনদিনের ছুটি দিয়েছেন।

এদিকে গত রোববার শিক্ষক চিন্ময় বসুর বিদ্যালয়ে যোগদান করার কথা থাকলেও আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের যোগদান করেননি।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাবেয়া সুলতানা বলেন, শিক্ষক চিন্ময় বসুর কু-কর্মের কথা পঞ্চম শ্রেণির অনেক ছাত্রীর অভিভাবকই আমাকে জানিয়েছেন। আমরা তার বদলিসহ শাস্তি দাবি করছি।

কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।