ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহ করবেন না: সুলতানা কামাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহ করবেন না: সুলতানা কামাল ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: নাগরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চান উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, আমি কারও অনুগ্রহ চাই না।  

বুধবার (১৭ মে) ‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।

সুলতানা কামাল বলেন, আমরা এ দেশের সম্মানিত নাগরিক। আমি কর দেই। আমি আমার নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতে চাই। আমি কারও অনুগ্রহ চাই না। দয়া করে আপনারা অনুগ্রহের কথা বলবেন না আমাদের। কেউ দেশের এমন অবস্থানে নেই যে, নাগরিকদের অনুগ্রহ করতে পারে। অনুগ্রহ করে আমাদের অনুগ্রহ করবেন না।

তিনি আরও বলেন, জেলেদের যে টাকা ভাতা দেওয়া হয়, সেটাকে আপনারা (আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তা) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ। কেনো এটা সানুগ্রহ হবে? আমার করের পয়সায় এই টাকা আসছে। সরকার সেই টাকা জেলেদের ভাতা হিসেবে দিয়েছে। এটা সানুগ্রহের কি আছে? আপনারা কি কখনো চিন্তা করেন, একটি মানুষের পাঁচ জনের পরিবারের ৪০ কেজি চালে এক মাস চলে কিনা? তারপর ওরা (জেলেরা) যদি কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়, তখন আইন ভাঙার কথা কোন বিবেকে বলেন?

তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আজকে এখানে যিনি এসেছেন মাসুদ আরা মমি (মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার উপপ্রধান), তিনি আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তারা যেভাবে এই সমস্যাটাকে (ইলিশ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি) দেখেছেন, যেভাবে সমস্যাটা সমাধান করার চেষ্টা করছেন, সেই তথ্য তিনি দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই তথ্যের সুফলটা আমরা জেলেদের কাছ থেকে শুনি না কেন? যারা মাছ ধরছেন, তারা শোনেন না কেন?

সুলতানা কামাল আরও বলেন, আমরা যারা ভোক্তা, আমরা আগে ইলিশের সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ইলিশ খেয়েছি। এখন কেন খেতে পারি না? যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়েছে তাহলে আমরা সাধারণ মানুষরা কেন ইলিশ কিনতে পারি না? আমাকে ইলিশ কিনতে হলে, কয়েক হাজার টাকা নিয়ে বাজারে যেতে হবে, তাহলে হয়তো কখনো কখনো কিনতে পারবো। এই যে একটা তফাৎ রয়ে গেছে এটাই সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিত্তশালীদের বিচ্ছিন্ন করছে।

বাপার সভাপতি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সদিচ্ছা নিয়ে খুব বেশি মানুষের মনে সন্দেহ নেই। তিনি খুবই চান, বাংলাদেশ সোনার বাংলা হোক, প্রতিটি মানুষের মাথার উপর ছাদ থাকুক, কোনো মানুষ যেনো না খেয়ে মারা না যাক। তার আন্তরিকতার প্রতি আমরা কেউই প্রশ্ন তুলি না। কিন্তু সেই কাজগুলি হয় না কেন? কেন এখনো সব মানুষের মাথার উপর আমরা ছাদ দিতে পারি না?

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি একজন মন্ত্রী বলেছেন, এখন মানুষ ডাল-ভাতের জন্য কাঁদে না, মাছ-ভাতের জন্য কাঁদে। বাবু ভাই (খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০টি ইলিশ মাছ পান, সাধারণ মানুষকে ইলিশ মাছের জন্য কাঁদতে হয় কেনো? এই বিষয়গুলি দেখার দায়িত্ব আপনাদের (আইনপ্রণেতা)। এটা তো আপনাদের দেখতে হবে। এটা বললে হবে না, আপনি মাছ-ভাতের জন্য কাঁদছেন কেনো, আমি তো ২৪ ঘণ্টায় ইলিশ মাছ আনতে পারি। আপনি পারেন, আমি পারি না। আপনার পারা এবং সাধারণ মানুষের না পারার মধ্যে পার্থক্য হবে কেন? সেই জায়গাটা দেখার ব্যাপার আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা অনেক কাজ করেছি, অনেক দূর এগিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে অত্যন্ত গর্বিত। বাংলাদেশের উন্নয়ন আজকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেই উন্নয়নের সুফল সবাই পাচ্ছে কিনা? এটা দোষারোপের ব্যাপার না। যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তাদের শুনতে ও বুঝতে হবে, কেনো ওনারা (জেলেরা) এসব কথা বলছেন? ওনারা কি দেশের শত্রু? ওনারা দেশকে ভালোবাসেন না। শুধু আমি একাই দেশকে ভালোবাসি। এই ওদ্ধত্ব থাকা উচিত না।

সুলতানা কামাল বলেন, সরকার যতটা অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে, ততটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হয়নি। এ জন্য সরকার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ব্যাপার ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ইলিশকে রক্ষা করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন (জেলেরা), তারা যেনো আইন ভঙ্গ করতে বাধ্য না হয়, এটা আপনারা (আইনপ্রণেতা) দেখবেন। আমরা আইন মানতে চাই, যদি সবাই আইন মানে। মাথার উপরে যারা আছেন, তারাই যদি আইন না মানেন, তাহলে আমরা তো আইন মেনে শুধু পিছনেই চলে যাবো। তখন তো আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে কারেন্ট জালই ব্যবহার করতে হবে, জাটকাই ধরতে হবে। আমাদের যেনো পরস্পরের সঙ্গে সমঝোতা থাকে, আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে সৎপথে চলতে চাই, সৎভাবে থাকতে চাই, সুন্দরভাবে থাকতে চাই। এর জন্য সব মানুষের সামাজিক, আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার জরুরি তাগিদ রয়ে গেছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওহাব, মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান (ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখা) মাসুদ আরা মমি, মৎস্য গবেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আজহার, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী নিখিল চন্দ্র ভদ্রসহ উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠণের সংগঠক ও মৎস্যজীবীরা।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
এসসি/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।