ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সফেদ কাপড়ে মোড়ানো চেনা মুখগুলো, ওসমানী চত্বরে স্বজনদের আর্তনাদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৩
সফেদ কাপড়ে মোড়ানো চেনা মুখগুলো, ওসমানী চত্বরে স্বজনদের আর্তনাদ ছবি- নাসির উদ্দিন

সিলেট: সাত সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া চেনা মুখগুলো এখন সফেদ কাপড়ে মোড়ানো। কারো বাবা, কারো স্বামী, কেউবা ভাই হারিয়েছেন।

আপনজনদের হারানোর বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর।

বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া একজন সিলেটের এবং আরেকজন নেত্রকোনার বাসিন্দা।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট ও পুলিশের টিম উদ্ধার কাজে অংশ নেয় এবং হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর নারীসহ আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে ভিড় করেন স্বজনরা। স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের বাতাস।

দুর্ঘটনায় আহত ঠিকাদার শের ইসলাম বলেন, আজ (৭ জুন) সকালে ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুরে ভবনের নির্মাণ কাজে যাচ্ছিলেন তারা। পথিমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে তার বড় ভাই সায়েদ নুর (৬০) নিহত হয়েছেন।

ছেলেকে রেখে চলে গেলেন বাবা
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রক্ত ঝরছে মিজানের। দুর্ঘটনায় তিনি আহত হলেও হারিয়েছেন বাবা হারিছ মিয়াকে।

আহত মিজান বলেন, আমরা কাজের জন্য ওসমানীনগরের তাজপুর যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে বিশ্বনাথ রশিদপুর পেরিয়ে ঘটনাস্থলে যেতেই সামনের ট্রাকটি তাদের ট্রাকের সামনে চলে আসে। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। আমাদের লোকজন ছিটকে গিয়ে ট্রাকের নিচে এবং রাস্তার ওপর পড়লেন। ট্রাকটিও উল্টে যায়। ঘটনাস্থলে তার বাবাসহ ১১ জন এবং হাসপাতালে আনার পর আরও ২ জন মারা যান।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে আর্তনাদ করছিলেন মর্তুজা আলী। অভিভাবকতুল্য চাচাতো ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ভাইকে হারিয়ে বিলাপরত রাজিয়া বেগম বলছিলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেলো। এভাবে চলে যাবেন জানলে ভাইকে কাজে পাঠাতাম না।

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এভাবেই বিলাপ আর আর্তনাদ করছিলেন নিহতদের স্বজনরা। হাসপাতালের মর্গের সামনে সফেদ কাপড়ে মোড়ানো নিহতদের মরদেহ। ক্রমান্বয়ে সেগুলো এসে বুঝে নিচ্ছেন স্বজনরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৩
এনইউ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।