ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংবাদ পরিবেশনে দেশের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুণ্ন না হয়: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
সংবাদ পরিবেশনে দেশের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুণ্ন না হয়: শেখ হাসিনা চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: দেশের অগ্রযাত্রা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা সমালোচিত হয় এমন কোনো সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে।

সোমবার (১০ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত ৪৩৮ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তথ্যসচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, টকশোতে ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে, যা বলার তাই বলে যাচ্ছে। সব কিছু বলার পরও বলে কথা বলার স্বাধীনতা নাই। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল, জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল, এরশাদের আমলে ছিল? 

তিনি বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করুন, খালেদা জিয়া যখন সরকারে এলো দক্ষিণ অঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতেই পারেনি। সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে এত অত্যাচার করেছিল মানুষের ওপরে। সেখানে যেভাবে মেয়েদের রেপ করেছে, খুন করেছে, আমি প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছি।  

তিনি আরও বলেন, কত মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে তাদের এই অত্যাচারে। তাদের এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কাজ, তারপর অপারেশন ক্লিনহার্টে মানুষ হত্যা করা, তাদের এসব কর্মকাণ্ড কখনও কোনো পত্রিকা সাহস করে লিখতেই পারত না। আর যে পত্রিকা লিখত, তার তো জবাব দিতেই হতো।  

শেখ হাসিনা বলেন, যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, এই ১৪ বছর সাংবাদিকরা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা এর আগে কখনও কেউ ভোগ করেনি, এটা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবেই বলতে পারি। আমরা চাই আমাদের দেশের কল্যাণে যেন সমালোচনা হয়, দেশের ক্ষতি করার জন্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনকল্যাণের জন্য কাজ, দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে সবার জন্যই আমরা সহযোগিতা করে আসছি, যাতে জীবনমান উন্নত করা যায়। আজ কিন্তু সেই উন্নতিটা হয়েছে। হ্যাঁ, এই সময় মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমি জানি। ইউক্রেন যুদ্ধের পর স্যাংশনের ফলে মুদ্রাস্ফীতি, আমাদের দেশে কত আর মুদ্রাস্ফীতি, অন্যান্য উন্নত দেশে দেখবেন যে কী দুরবস্থা মানুষের! তারা তো তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেও পারে না।  

তিনি বলেন, আমরা তো এটুকু দাবি করতে পারি, এদেশের মানুষ নুন-ভাত চাইত, নুন ভাত জোটাতে পারত না। আজ তারা মাংস খাওয়ার চিন্তা করে। মাংসের দাম বেড়েছে, এই কথাটা তারা বলতে পারে। এই অবস্থা কি বাংলাদেশে কখনও ছিল, ছিল না। এই যে উন্নতিটা এটাও তো একটা উন্নতি। এখন তারা আর নুন-ভাত চায় না, ভাত-মাংস চায়। আমরা এই অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছি।  

তিনি আরও বলেন, এখন সারা বিশ্বেই একটা সমস্যা। সেই সমস্যার কারণে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়েছে। আমরা আহ্বান করেছি, কেউ এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না রাখে, কেউ জমি অনাবাদি রাখছে না, উৎপাদন বাড়ছে। তবে বর্ষাকালে সব সময় কাঁচা মরিচের দাম পাওয়া যায়, কারণ বর্ষার জন্য ক্ষেতে মরিচ উৎপাদনও হয় না, আর ক্ষেতে পানি আসে বিধায় মরিচ তোলাও যায় না। এই সমস্যাটা আছে। মানুষ যাতে ঝালটা খেতে পারে, আমরা মরিচ আমদানি করে সে ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি।

সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। হ্যাঁ, কোথাও খারাপ দেখলে তা অবশ্যই বলবেন। ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর থেকে যে অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর, সাংবাদিকদের ওপর হয়েছে, সেগুলো সবার মনে রাখা উচিত।  

তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা (দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার কারণে) আর বাধাগ্রস্ত হবে না। স্বাধীনতা উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। তবে তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। আপনারা অবশ্যই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে আপনাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই আপনাদের পাশে আছে, আমরা থাকব। আমি তো প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যখন যে ধরনের সহযোগিতা দরকার, আমি সব সময়ই সেটা করে যাই। এতে আমার কাজের পরিমাণ বাড়ে, হাজার হাজার দরখাস্ত দেখতে হয়, পড়তে হয়, কাকে কী দেব, তারপরও আমি কিন্তু করে যাওয়ার চেষ্টা করি। কল্যাণ ট্রাস্ট আমি এই জন্যই করে দিয়েছিলাম, আমি যখন থাকব না, তখনও যেন কেউ বঞ্চিত না হয়, সবাই যেন পায়।    

প্রধানমন্ত্রী সংবাদমাধ্যম মালিকদের বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, আগে টেলিভিশন চালাতে গেলে ডলার দিয়ে স্যাটেলাইট ভাড়া করতে হতো, এখন ভাড়া করতে হয় না। এখন অনেক টাকা বেঁচে যাচ্ছে, বেঁচে যাচ্ছে বলে তো কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দিতে পারেন। মালিকদের তো এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
এসকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।