ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্বোধনের অপেক্ষায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, স্বস্তি দেবে কতটা

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩
উদ্বোধনের অপেক্ষায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, স্বস্তি দেবে কতটা

ঢাকা: ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তি সইয়ের এক যুগ পর আলোর মুখ দেখছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর)।

কর্তৃপক্ষ আশা করছে, বিমানবন্দরের কাওলা র‍্যাম্প দিয়ে উঠে ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফার্মগেট নামতে সময় লাগবে ১০-১২ মিনিট। গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।

প্রকল্প সূত্র বলছে, বিমানবন্দর এলাকায় দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে নামছে একটি র‍্যাম্প। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীর দুটি র‍্যাম্পের কাজ শেষ হয়নি। এজন্য আপাতত র‍্যাম্প দুটি বন্ধ থাকবে।

আর ফার্মগেট থেকে যাত্রাবাড়ী অংশের কাজ চলমান রয়েছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

নগর বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পিপিপির মাধ্যমে নেওয়া এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো, প্রাইভেট কারের মতো বাহনগুলোর জন্য এ প্রকল্প স্বস্তি নিয়ে এলেও গণপরিবহনের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম র‍্যাম্পটি বিমানবন্দরের বিপরীত পাশে কাওলা এলাকা থেকে উঠছে। পাশেই আশুলিয়া-বিমানবন্দর এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আলাদা লেন রয়েছে। কাজ শেষে এক্সপ্রেসওয়ে দুটি একসঙ্গে যুক্ত হবে।

আর ফার্মগেট, বনানী হয়ে আসা বাহনগুলো নামবে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে। এরপর কুড়িলে তিনটি র‍্যাম্প আছে ওঠা-নামার জন্যে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতেও যাওয়া-আসা করা যাবে এই র‍্যাম্প তিনটি ব্যবহার করে।

এরপর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে একটি র‍্যাম্প আছে, যেটি দিয়ে এয়ারপোর্টে থেকে আসা গাড়িগুলো নামতে পারবে। আর অন্য পাশে একটি র‍্যাম্প আছে যেটি দিয়ে উঠে এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া যাবে।

এরপরে একটু সামনে আরেকটি র‍্যাম্প এসে নেমেছে, যেটি দিয়ে বনানী ও গুলশান-২ এর দিকে যাওয়া যাবে। এর মধ্যে একটি বাঁয়ে বাঁক নিয়ে গুলশান এভিনিউয়ের দিকে যাওয়া যাবে।

পাশেই চেয়ারম্যান বাড়ি ও সড়ক ভবনের পাশে একটি ওঠার র‍্যাম্প যুক্ত হয়েছে এক্সপ্রেসওয়েতে। এখানে র‍্যাম্প তৈরির ফলে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে মহাখালী সড়কটি সরু হয়ে যাবে।

ফলে বেড়ে যাবে এই সড়কে গাড়ির চাপ, এর সামনে মহাখালী মোড়েও থাকে তীব্র যানজট। বড় ভোগান্তি হয়ে দেখা দেবে এই র‍্যাম্প। যদিও এটি আপাতত বন্ধ থাকবে। এর কাজ চলমান আছে।

এরপর মহাখালী বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশে ওঠা ও নামার জন্য দুটি র‍্যাম্প আছে। এর মধ্যে ওঠার র‍্যাম্পটি আপাতত বন্ধ থাকবে। এরপর বিজয় সরণিতে দুটি র‍্যাম্প আছে। এই দুটি র‍্যাম্প বিজয় সরণির উড়াল সেতুতে যুক্ত হয়েছে।

এ দুটি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে এক্সপ্রেসওয়েতে। উড়াল সড়কের সঙ্গে মিলিয়ে এগুলো করা হয়েছে। এরপর তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশ দিয়ে একটি র‍্যাম্প নেমে গেছে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাড়বে যানজট

এ প্রকল্পের শুরু থেকেই পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শহরের মধ্যে নামার র‍্যাম্প বিশেষ করে- বনানী, মহাখালী ও বিজয় সরণিতে গাড়ির চাপ তৈরি করবে।

পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তা ভাগ হচ্ছে, কিন্তু গাড়ির পরিমাণ সেই একই আছে। ঢাকায় যে গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে, সেগুলো সুবিধা পাবে। যে গাড়িগুলো নগরের বিভিন্ন র‍্যাম্পে নামবে, সেখানে তো আগে থেকেই গাড়ির একটা জট থাকবে। ফলে আরও জট হতে পারে।

গণপরিবহনের জন্যে পরিকল্পনা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকায় পৌনে চার কোটি ট্রিপের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ির ট্রিপ। এই আট শতাংশের জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। বাকি যারা সাধারণ মানুষ আছে, তাদের কোনো বিকল্প থাকছে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এর সুবিধা হলো এয়ারপোর্ট থেকে যে গাড়িগুলো সরাসরি যাত্রাবাড়ীর দিকে যাবে, সেগুলোকে যানজটে পড়তে হবে না।

তবে শহরের ভেতরের র‍্যাম্প যানজট বাড়াবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বনানী ও মহাখালীর মতো ব্যস্ত সড়কে যে র‍্যাম্প নামানো হয়েছে, সেখানে যানজট তৈরি হবে। মহাখালীতে যে র‍্যাম্প নামবে, সেটি যানজট তৈরি করবে।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বাংলানিউজকে বলেন, মেগাপ্রকল্প নেওয়া হয় জনস্বার্থ বিবেচনায়। কিন্তু এক সময় দেখা যায় জনস্বার্থের বদলে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখা হয়। ফলে বাড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরীতে করা হয় যেন যানবাহনগুলো সড়কের যানজট কমিয়ে শহরের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু এ প্রকল্পে বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি ও ফার্মগেটে এক্সপ্রেসওয়ে যানজট বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫টি ওঠা-নামার র‍্যাম্প থাকলেও খোলা হবে ১৩টি। মহাখালী ও বনানীর দুটি আপ (ওঠার) র‍্যাম্প আপাতত বন্ধ আছে। উদ্বোধনের সময় সামনে, এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে পারব না।

তবে এটি উদ্বোধন হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এনবি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।