ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জুতা পায়ে বিজয় স্তম্ভে উঠে পতাকা উত্তোলন করলেন এমপি-ইউএনও!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
জুতা পায়ে বিজয় স্তম্ভে উঠে পতাকা উত্তোলন করলেন এমপি-ইউএনও!

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ঐতিহাসিক নওগাঁ দিবস উপলক্ষে জুতা পায়ে বিজয় স্তম্ভে উঠে পতাকা উত্তোলন করলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও জুতা পায়ে ওঠেন সেখানে।

 

শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে স্থাপিত বিজয় স্তম্ভে এ ঘটনা ঘটে।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে পতাকা উত্তোলনের সময় জুতা পায়ে বিজয় স্তম্ভে ওঠেন এমপি ডা. আব্দুল আজিজ, ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আরশেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।  

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতারাও। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকেই জানাচ্ছেন প্রতিবাদ।  

তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক জার্সিয়াস মিলন রুবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বৃহত্তম যুদ্ধ হয়েছে নওগাঁয়। প্রয়াত নেতা সাবেক সংসদ আমজাদ হোসেন মিলন জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করে একটি বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। ২০০৯ সাল থেকে আমরা নওগাঁ দিবস পালন করি। প্রতিবছরই সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা থাকে। এবার আমাদের বলা হয়নি। আজ সকালে জানতে পারলাম সংসদ সদস্য ও প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মকর্তা জুতা পায়ে দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে উঠে পতাকা উত্তোলন করেছেন। যেহেতু আমার পিতৃসমতূল্য মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এটা আমাদের জন্য অনেক দুঃখের ও লজ্জার। তাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।  

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুস সামাদ বলেন, অনেকে হঠাৎ করে জুতা পায়ে উঠে গিয়েছিল।  

পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাস বলেন, এটা ঠিক হয় নাই। এতে শহীদদের প্রতি অসম্মান জানানো হয়েছে।  

ড. হোসেন মনসুর বলেন, জুতা পায়ে বিজয় স্তম্ভে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান করা হয়েছে। এটা আমাদের চেতনা বিরুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রতি অপমান। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যখন ফুল দেই তখন জুতা খুলে উঠেছি। পতাকা উত্তোলনের সময় আপনাদের পায়ে জুতা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটা খেয়াল করিনি, তবে আমরা যখন ওপাশে যাই তখন জুতা খোলাই ছিল।  

এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।  

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের নেতৃত্বে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের নওগাঁয় পাক হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে তিন শতাধিক পাক সেনা ও রাজাকারদের হত্যা করে বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা। ওই যুদ্ধের স্মৃতি স্মরণে নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে বিজয় স্তম্ভ স্থাপন করা হয় এবং প্রতিবছর ১১ নভেম্বর দিবসটি পালন করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।