ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি

রাঙ্গাবালীতে এখনও নিখোঁজ ২৫ জেলে, পরিবারে আহাজারি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
রাঙ্গাবালীতে এখনও নিখোঁজ ২৫ জেলে, পরিবারে আহাজারি

পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালির তিনটি ট্রলারসহ নিখোঁজ হয়েছেন ২৫ জন জেলে। এদের মধ্যে রয়েছে একই পরিবারের তিন বোনের তিন সন্তান।

 

উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের বাসিন্দা হাসান জোমাদ্দারের ট্রলারের আটজন, মৌডুবী ইউনিয়নের কাজিকান্দা দিদার মৃধার ট্রলারের আটজন ও একই এলাকার হিমু হাওলাদারের মালিকানাধীন ট্রলারের নয়জন জেলে নিখোঁজ হয়।  

আজ পর্যন্ত কারো সন্ধান না পাওয়ায় আহাজারিতে জেলে পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। করো সন্তান, কারো স্বামী, কারো ভাই হারিয়ে পাগল প্রায় পরিবারের সদস্যরা। পরিবারগুলোর আহাজারিতে যেন ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাস। গত ছয় দিনেও খোঁজ মেলেনি এসব জেলেদের।  

জানা গেছে, গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়েছিল নদীতে। এরপর এক দুবার যোগাযোগ করতে পারেন পরিবারের লোকজন। পরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আর যোগাযোগ করা যায়নি। যেকোনোভাবে তারা জীবিত উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরবে এমন আশায় বুক বেঁধে আছে পরিবারগুলো।  

পরিবারের দাবি সরকারের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।  

স্থানীয় জেলে ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর ধারণা, অতীতেও এমন নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। সেসব জেলেরা ঢেউয়ের কবলে পড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ে সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকে। এবারেও হয়ত তেমন কিছু হয়েছে। তারা এখনো জীবিত আছেন বলে সবার বিশ্বাস।

নিখোঁজ জেলেদের একজন জিসান মাহমুদ (২১)। তার মায়ের সঙ্গে কথা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, আমার বাবা সাগর ভয় পায়। আমার অভাবের সংসার। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার ছেলে চিকিৎসা করানোর জন্য ইনকাম করতে সাগরে গেছে। বুধবার বিকেলে গেছে বাড়ি থেকে। এরপর ট্রলারে ওঠে তার একবার কথা হয়েছিল। আর কোনো যোগাযোগ করতে পারি নাই। আমার বাবার ফোনে অনেক কল করছি কিন্তু আমার বাবার ফোন বন্ধ। সরকারের কাছে দাবি আমার বাবারে যেন ফিরাই আইনা দেয়।  

এদিকে ট্রলার মালিকরা বলছেন, গত বুধবার সকালে গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করার উদ্দেশ্য ট্রলার ছেড়ে যায়। কিন্তু পরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। তারা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনো।  

কোড়ালীয়া লঞ্চঘাট মৎস্য সমিতির সভাপতি জহির হাওলাদার বলেন, তারা ডুবে যায়নি এটা আমাদের বিশ্বাস। কারণ তাহলে অন্তত ২৫ জন জেলের একটি মরদেহ হলেও পাওয়া যেত। আমরা ধারণা করছি হয়ত সুন্দরবনে রয়েছে। নয়তো ভারত বা অন্য কোনো দেশে ঢুকে পড়েছে তারা। আমরা কোস্টগার্ড, নেভিসহ বিভিন্ন বাহিনীর হেড কোয়ার্টারে জানিয়েছি। এছাড়াও সবার পরিবারের লোকজন সাগর এবং দেশের মধ্যে সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য গেছে।  

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জেলেদের ট্রলারগুলোর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ট্রলারে জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস, নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য রেডিও সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছেন। এছাড়াও সাগরে বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করার দাবি জেলেদের।  

মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় এ পর্যন্ত নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা মোট ১৬ হাজার ৮১৭ জন। এদিকে, নিবন্ধিত পাঁচ হাজার ১৫১ জন ও অনিবন্ধিত রয়েছে আরও তিন থেকে চার হাজার জেলে। তাদের বেশিরভাগই মৎস্য শিকার করেন বঙ্গোপসাগরে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টিম নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে। সুন্দরবন অঞ্চলের মোংলা জোনে দুজনের মরদেহ পাওয়া গেছে কিন্তু তারা এই পঁচিশ জনের মধ্য থেকে কিনা সেটা নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা শনাক্ত করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। তবে আমরা নিয়মিত জেলা পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং আশা করি সবাইকে যেন জীবিত অবস্থায় ফিরে পাবে পরিবারের লোকজন।

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, তিনটি ট্রলারসহ ২৫ জন জেলে ও ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। আমরা তাদের খোঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মালিক পক্ষ ও খোঁজাখুঁজি করছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা চেষ্টা করছি তাদের একটি সন্ধান যেন পেতে পারি। আমরা সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়েছে।

এর আগের বছরগুলোতেও রাঙ্গাবালী থেকে নিখোঁজ, নিহত জেলের সংখ্যা রয়েছে অনেক। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে তাদের পরিবারগুলো। তবে প্রশাসনের কাছে নেই তাদের নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য। কোনো প্রকার সহায়তার আওতায় ও আসেনি এই পরিবারগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।