ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচন হয়েছে একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ: টিআইবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
নির্বাচন হয়েছে একপক্ষীয় ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ: টিআইবি প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, এবারের নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি।

এই নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৪১টি আসনেই প্রকৃত অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।  

টিআইবি বলছে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করলেও বেশিরভাগ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির মতে, এই নির্বাচনের ফলে গণতান্ত্রিক অবনমনের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনী কৌশল ও অভিনবত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এতে নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলেও বেশিরভাগ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না ২৪১টি আসনের ভোট।

টিআইবি আরও বলেছে, নির্বাচনে শেষের এক ঘণ্টায় ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটের দিন সারাদেশে অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভোটের দিন স্বল্প ভোটার আগমন এবং ডামি লাইন তৈরি, বিভিন্ন আসনে অন্য দলের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, ভোটের আগে ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্য সিল মারাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

লিখিত বক্তব্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতা অব্যাহত রাখার কৌশল বাস্তবায়নে একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না, তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। কেননা নির্বাচনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিতের যে পূর্বশর্ত থাকে, তা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিপালিত হয়নি।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি বলে টিআইবি মনে করছে। সংস্থাটির মতে, বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রীক ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে।

টিআইবি আরও বলে, নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসন অনুরূপভাবে একই ‘অ্যাজেন্ডা’র সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে।

টিআইবি মনে করছে, সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাব্য সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে যতটুকু আগ্রহ থাকবে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হবে শুদ্ধাচার ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সরকারের প্রতি জনআস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন ও তার প্রভাব। দেশের গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমাগত গভীরতর হবে।

অনুষ্ঠানে টিআইবির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের সদস্য মাহফুজুল হক, নেওয়াজুল মওলা ও সাজেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
এইচএমএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।