ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সানাই বাজিয়ে হলো বট-পাকুড়ের বিয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সানাই বাজিয়ে হলো বট-পাকুড়ের বিয়ে

দিনাজপুর: সানাই আর ঢাক-ঢোলের তালে নাচছেন অনেকেই। সঙ্গে উলুধ্বনিও শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে।

কলা গাছ, সিঁদুরদানী, বিভিন্ন রকম ফুল ফলে তৈরি ছাঁদনাতলা। পুরোহিত মশাই পাঠ করছেন একের পর এক মন্ত্র। চারদিকে উৎসুক জনতার ভিড় অনেক। তবে চোখে পড়ছে না বর আর কনের।

প্রথম দেখায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বর-কনের বিয়ে মনে হলেও বাস্তবে বিয়েতে নেই কোনো বর-কনে।  

তবে বরের স্থলে পাকুড় গাছ আর কনের স্থলে রয়েছে বটগাছ। এত সব আয়োজন এই বট-পাকুড় গাছের বিয়েকে কেন্দ্র করেই।  

বুধবার (১২ মার্চ) দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী হিরাবাগানের মাঠে এই ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে আয়োজন করা হয়।  

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বট-পাকুড় গাছের বিয়ের আয়োজন। বিয়েতে প্রায় ৩০০ জন অতিথির আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে বিয়ের ও পূজার সকল কার্যক্রম চলছে। অপরদিকে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য চলছে রান্নাবান্না। আলু, বাঁধাকপি, গাজর, বেগুনসহ বিভিন্ন রকম সবজি দিয়ে নিরামিষ তরকারি আর ভাত রান্না হচ্ছে। অনেকেই বট-পাকুড় গাছের বিয়ের কথা শুনলেও প্রথমবারের মতো সাক্ষী হতে পেরেছেন ব্যতিক্রমী এই বিয়ের।  

কথা হলে বিয়েতে আসা অতিথি ইশ্বিতা কুণ্ডু রিতা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। অনেকবার শুনেছি বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা। কিন্তু এই প্রথম নিজ চোখে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেখলাম। বিয়েতে অনেকের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হলো। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি। ’

স্থানীয় বাসিন্দা সমাপ্তি অধিকারী বলেন, ‘সাধারণত বট আর পাকুড়ের বিয়ে কোনো জায়গা দেখা যায় না। এই প্রথম বট আর পাকুড়ের বিয়ে দেখলাম। খুব ভালো লাগলো। মানুষ যেভাবে বিয়ে করে ঠিক সেভাবে বট আর পাকুড়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। ’

দর্শনার্থী চন্দ্রনা মোহন্ত বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমাদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়ে সন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। আজ খুব আনন্দে আমরা বিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ’

বট-পাকুড় গাছের বিয়েতে বরের বাবা হিসেবে জগদীশ চন্দ্র মোহন ও কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন কালু চন্দ্র মোহন্ত। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়ে পুণ্য অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত সন্তান লাভের আশায় এই আয়োজন বলে জানান বর-কনের বাবা।  

বরের বাবা জগদীশ দেবনাথ বলেন, ‘আমরা ৪টি মেয়ে আছে। কিন্তু একটাও ছেলে নাই। তাই আমি এই বিয়েতে বরের বাবা হয়েছি। এর মাধ্যমে আমাদের সব মঙ্গল হবে। আমাদের পরিবারের বিপদ-আপদ দূর হবে। ’

কথা হলে কন্যাদান করা কালু চন্দ্র মোহন বলেন, ‘আমার কোনো মেয়ে নেই। আমি এ যাবৎ শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। কোনো দিনও সেই বিয়ে দেখিনি। আজকে নিজেই কন্যার বাবা হিসেবে বটগাছকে সম্প্রদান করছি। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’

বিয়ের পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়। তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোনো অভাব বা দুঃখ-কষ্ট তাদের জীবনে আসবে না। তাই আজকে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়ে যাবে আমি মনে করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।