ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীর লক্কড়-ঝক্কড় বাস আমাদের উন্নয়নকে লজ্জা দেয়: সেতুমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
রাজধানীর লক্কড়-ঝক্কড় বাস আমাদের উন্নয়নকে লজ্জা দেয়: সেতুমন্ত্রী প্রস্তুতি সভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীতে চলা ফিটনেসবিহীন  লক্কড়-ঝক্কড় বাস বাংলাদেশের উন্নয়ন-অর্জনকে লজ্জা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বনানীর বিআরটিএর সদর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আপনারা (পরিবহন নেতা) বলছেন, লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি বাইরে থেকে সিটিতে আসে। এই সিটিতেই লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির অনেক কারখানা আছে। আমি নিজেও ভিজিট করেছি। দেখেছি রং লাগাচ্ছে। এমন রং, যা ১০ দিন পরে উঠে যায়। রং থাকে না।  

তিনি বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্জনের ও উন্নয়নের যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সেই দেশের রাজধানীতে বাসগুলোর দিকে তাকানো যায় না। মফস্বলের গাড়ি এরচেয়ে অনেক ভালো। এটি আমাদের উন্নয়ন, অর্জনকে লজ্জা দেয়। এসব গাড়ি চলে চোখের সামনে।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ এত এগিয়ে গেলো, আর আমাদের গাড়ির গরিব চেহারা। রং দিয়ে লাভ নেই, ফিটনেস না থাকলে। এর একটি সমাধান নেতাদের কাছেই আমি চাই। এভাবে চলতে পারে না।

সেতুমন্ত্রী বলেন, অনেকদিন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি। ঈদের প্রস্তুতিমূলক সভাও প্রতি বছর আমরা করেছি। প্রস্তুতি সভায় যে সিদ্ধান্তগুলো হয়, সেগুলোর বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে, এর মূল্যায়ন আমরা করি না। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিই, তা বাস্তবে কতটা কার্যকর, তা মূল্যায়ন করা উচিত।  

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ে আমাদের দুর্ভাবনা চলছে৷ এর দুর্ভাবনার শেষ নেই। দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী এ নিয়ে নানা বিষয় আসে। এখানে থ্রি-হুইলার, মোটর সাইকেল, বেপরোয়া চালনাও আছে। সবকিছু মিলিয়ে দুর্ঘটনা হচ্ছে। আমি সচিবকে বারবার বলেছি, মূল বিষয়গুলোতে হাত দেওয়া দরকার।  

পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রকল্প বাংলাদেশ নেয়নি। কিন্তু ইদানীং একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, রোড সেফটি প্রোগ্রাম। এর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে হবে। এ নিয়ে মনোযোগী হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে বারবার বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল এখন সড়কের সবচেয়ে বড় উপদ্রব। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা দরকার। জাতীয় সড়কে আমরা মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়তে হবে। হাইওয়ে পুলিশের যা জনবল আছে, তা যথেষ্ট নয়। এ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, আমি যখন রাস্তা দিয়ে চলি, তখন তিন চাকার গাড়ি রাস্তায় নেই। আমি যখন রাস্তা দিয়ে যাই না, তখন অহরহ চলতে থাকে। এখানে আমরা কতটা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি? আমাদের হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি বিআরটিএর সক্ষমতা যদি বাড়াতে না পারি, তাহলে আমরা যত ভালো সিদ্ধান্ত নিই, কার্যকর করা খুবই কঠিন। এই হলো বাস্তবতা।

তিনি আরও বলেন, ফেনী থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে আসতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় লাগে হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে সিটিতে ঢুকতে। এখানে একটি সমস্যা আছে। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। এখন টোল বাড়ানোর জন্য এখানে কোনো কিন্তু সৃষ্টি করা হয় কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। এখানে মাঝে মাঝে দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা যানজট থাকে। এটা দেখতে হবে আর ঢাকার গেটওয়ে গাজীপুর, চন্দ্রা, নবীনগর, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমটা দেখতে হবে।

ঈদের আগে দুর্ঘটনা কমে, প্রাণহানিও কম হয়। কিন্তু ঈদের পর এত দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে, অবাক হতে হয়। ঈদের পরে নজরদারি কমে যায়। নজরদারি থাকে না। এ বিষয়ে দোষ না চাপিয়ে যার যার দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে মনে করেন মন্ত্রী। পরিবহন মালিকদের গাড়িগুলো সঠিক ফিটনেস নিয়ে রাস্তায় বের করতে বলেন তিনি।

এ সময় ঈদের আগে সাত দিন ও পরে পাঁচ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো খোলা রাখার অনুরোধ জানান মন্ত্রী। পাশাপাশি গার্মেন্টস ছুটির বিষয়টি দেখতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের সময় চাঁদাবাজি ও যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমাদের মনিটরিংয়ে আছে। যারা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কর্তৃপক্ষ যেন তাদের ওয়ার্নিং দেয়। চাঁদাবাজি কি বন্ধ করতে পারবেন? হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত কথা বলতে হচ্ছে।

সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান,  পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
এসসি/আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।