ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক

ঢাকা: ঈদুল ফিতর সারা মুসলিম জাহানের বৃহৎ ধর্মোৎসবের একটি। দিনটি পরিবার-পরিজন নিয়ে উদযাপন করতে চায় সকল বাঙালি মুসলমান।

তাই তো ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যান কর্মমুখী মানুষ। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারপরেও স্বস্তির ঈদযাত্রায় গলার কাঁটা যেন বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের যানজট প্রবণ ১০টি এলাকা চিহ্নিত করে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চলছে মেরামতের কাজ। ঈদের ছুটির আগেই এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়। তবে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে ঈদ উপলক্ষে কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি।

সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মেগা প্রকল্প আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বাইপাইল থেকে বগাবাড়ি পর্যন্ত সড়কটি মসৃণ ও প্রশস্ত রয়েছে। বগাবাড়ি থেকে ইউনিক বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দে ভরা। এছাড়া ইউনিক থেকে শিমুলতলা পর্যন্ত ঠিক থাকলেও প্রায় হাঁটুপানিতে তলিয়ে আছে সড়কটি। শিমুলতলা থেকে জামগড়া হয়ে ছয়তলা পর্যন্ত সড়কটিতে ইটের সোলিং করা হলেও খানাখন্দ লক্ষ্য করা যায়।

তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলায় ছয়তলা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এক লেন বন্ধ করে সড়কের মাঝে দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। অপর লেন হালকা প্রশস্ত করে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই এক লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় জামগড়ার ছয়তলা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে।

স্মার্ট পরিবহনের চালক শফিকুল বলেন, এই এলাকায় লাখ লাখ পোশাকশ্রমিক বাস করেন। তাদের বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গের মানুষ। পোশাকশ্রমিকরা আমাদের বাসের মতো অনেক পরিবহন রিজার্ভ করে থাকেন। ঈদে আমাদের পরিবহনের মতো অসংখ্য পরিবহন উত্তরবঙ্গে যাবে। ফলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অনেক পরিবহন সড়কে নামবে। তারা আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল ও নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক ব্যবহার করবে। ফলে যানজটের ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে সড়কটিতে। আব্দুল্লাহপুর-বাইপাল সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এই সড়কে এমনিতেই যানজট লেগেই থাকে। ঈদে এই যানজট কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এক সড়কে যানজট হলে অন্যান্য সড়কে অটোমেটিক যানজটের সৃষ্টি হয়।



প্রতি বছরই ঈদ উদযাপন করতে উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা জেলার গ্রামের বাড়িতে যান পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ছোটন সরকার। তিনি বলেন, যখন আব্দুল্লাহ্পুর-বাইপাইল সড়কে কোনো কাজ ছিল না, সড়ক স্বাভাবিক ছিল। তখনই জিরাবো থেকে বাইপাইল ১০ মিনিটের দূরত্বে পৌঁছাতে ৭/৮ ঘণ্টা লেগে যেতো। আর এখন সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান। জানি না এবার এবার ঈদযাত্রায় এই সড়ক পারি দিতে কত ঘণ্টা লাগবে। আব্দুল্লাহপুর থেকে কোনো যানবাহন এই সড়কে প্রবেশ করতে না দিলে হয়তো ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে। এছাড়া সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং, যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামাতেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও সৃষ্ট যানজট নিরসনে ব্যাপক সময় ও বেগ পেতে হয়।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা ঈদের ৬/৭ দিন আগেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বন্ধ করে দেব। এছাড়া আমাদের ৬০/৭০ জন লোক থাকবে, তারা প্রশাসনকে যানজট নিরসনে সহযোগিতা করবেন। এছাড়া সড়কে যত খানাখন্দ রয়েছে আমরা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব মেরামত করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বন্ধ করে দেব।

সড়কে পানি জমে থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, সড়কে আসলে শিল্পকারখানার পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। এটা তারা রাতের আঁধারে দিয়ে থাকে। এজন্য সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমাদের ৫টি পানির পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃষ্টি হলে কিংবা শিল্পকারখানার পানি জমলে তৎক্ষণাৎ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা যেখানে ডাইভার্শনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি, সেখানে কিন্তু ঠিকই করেছি। যেখানে যতটুকু জায়গা পেয়েছি ততটুকুই প্রশস্ত করার চেষ্টা করেছি। সড়ক যেমন আছে তাতে শৃঙ্খলা ঠিক থাকলে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে আশা করি।

যানজট লেগে থাকা প্রসঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালক বলেন, আসলে চালকদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা নেই। তারা প্রতিনিয়ত ডানপাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রী ও চালকরা একটু শৃঙ্খলার মধ্যে থাকলে এই যানজটের সৃষ্টি হতো না।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তরের ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডমিন হোসেন শহীদ চৌধুরী বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন। আমরা প্রতিবারের মতো এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে যেহেতু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের মাঝে তারা ডিভাইডার দিয়েছে। আমরা কিছু কিছু স্থানে এসব ডিভাইডার তুলে দেওয়ার জন্য বলেছি। এছাড়া যেখানে যতটুকু পরিমাণ সড়ক প্রশস্ত করা যায়, তা করার চেষ্টা করছি। আশা করি এবারও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য সড়কটি সংকুচিত হয়েছে। এছাড়া খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পকারখানার পানি সড়কে ছেড়ে দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে ঈদযাত্রার জন্য সড়কটি উপযোগী নয়। এদিক থেকে ঈদযাত্রার জন্য বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি। এই সড়ক ব্যবহার না করে গাজীপুর ও গাবতলী হয়ে যাত্রার জন্য অনুরোধ করছি।

তিনি আরও বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়কটিতে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি সড়কটিতে পার্কিং যাতে না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চালক ও যাত্রী সাধারণের সহযোগিতা অপরিহার্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।