ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কেই সফর শেষ হলো অড সিগনেচার ব্যান্ডের ভোকালিস্ট পিয়ালের

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
সড়কেই সফর শেষ হলো অড সিগনেচার ব্যান্ডের ভোকালিস্ট পিয়ালের আহসান তানভীর পিয়াল। 

নরসিংদী: অড সিগনেচার ব্যান্ডের পিয়াল ‘আমার দেহখান’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রায় আট মাস আগে। সেই গানের সুরে মনের ঘরে যে অনুভূতি উঁকি দিয়েছিল সেটাই আজ সত্যি হলো।

 

শনিবার (১১ মে) ভোরে সিলেটে যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর পাঁচদোনার ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে ইহ জাগতিক সফর শেষ করে পরপারে চলে গেলেন অড সিগনেচার ব্যান্ডের জনপ্রিয় গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট আহসান তানভীর পিয়াল।  

তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভক্তদের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা প্রিয় শিল্পীর জন্য শোক জানাচ্ছেন।

আহসান তানভীর পিয়াল চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা আবুল বাশারের বড় ছেলে। পৈতৃক বাড়ি সন্দিপ হলেও ছোট থেকে তিনি চট্টগ্রামেই বড় হয়েছেন।

স্বজনরা জানান, পিয়াল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পূর্ণ করেছে। এখন শুধু ইন্টার্নশিপ করা বাকি ছিল। স্কুল-কলেজ জীবনে ক্ষুদ্র পরিসরে গানের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সরাসরি গানের সঙ্গে মেতে উঠেন পিয়াল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে তিনি অড সিগনেচার ব্যান্ডের সঙ্গে গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট হিসেবে গাওয়া শুরু করেন। তার মায়াবী কণ্ঠে লাখো ভক্ত মুগ্ধ হয়ে থাকতো। অল্প সময়েই তিনি সবার প্রিয় গায়ক হয়ে ওঠেন।

শুক্রবার রাতে অড সিগনেচার ব্যান্ডের ৪ সদস্যসহ মাইক্রোবাসে করে সিলেটের এমসি কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। পরে ভোর ৫টার দিকে পাঁচদোনা ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে এলে ঢাকা অভিমুখী হানিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে  মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের চালক সালাম ও জনপ্রিয় শিল্পী পিয়াল নিহত হয়। আহত হয় ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্য শাকিব (২৬), আকিব আহমেদ (২৬) ও অমিতাভ রেজা চৌধুরী  (২৭)।

পিয়ালের মৃত্যুর খবরে সকালে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন বন্ধু জুনহাই। তিনি বলেন, আমরা ৪ বন্ধু বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন বলে, হঠাৎ সিলেটে অনুষ্ঠান ঠিক হয়েছে, এখন প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছি, পরে সিলেটে যাবো। সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।

তিনি আর বলেন, পিয়ালের আল্লাহ প্রদত্ত ভয়েস ছিল। তার গানের সুরে সবাই মুহিত হয়ে থাকতো। এমন একজন প্রতিভাবানকে আমরা হারালাম।

পিয়ালের বন্ধু ফাহাদ আহমেদ হিমু বলেন, পিয়াল খুবই জনপ্রিয় শিল্পী ছিল। সে গান ভালোবাসতো। আর গান গাইতে গিয়েই সড়কে প্রাণ হারালো। আমরা বন্ধুর হত্যাকারী ঘাতক বাস চালকের বিচার চাই।

ছেলের মরদেহ নিতে নরসিংদী সদর হাসপাতালে আসেন পিয়ালের বাবা আবুল বাশার। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোবাইল ফোনে স্বজনদের পিয়ালের মৃত্যুর সংবাদ দিচ্ছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি গান গাওয়া পছন্দ করি না। ছেলেকে বার বার গান গাইতে নিষেধ করেছি। আমি ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলি। সে আমাকে লুকিয়ে গান গাইতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার গান গাওয়া বেড়ে যায়। সুন্দর কণ্ঠ ও ভালো গান গাইত বলে অল্প দিনেই সে সবার মন জয় করে ফেলে।

তিনি আর বলেন, গতকাল ৪টায় পিয়ালের সঙ্গে কথা বলেছি। তার বাসায় ছোট ছেলে পাপন বেড়াতে গেছে। সে আজকের অনুষ্ঠানের কথা বলেনি ভয়ে, ভাইয়ের সঙ্গে সিলেটে যেতে চেয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করি। ও যদি সঙ্গে যেত তাহলে আজকে আমি দুই ছেলেকে হারাতাম এই বলে তিনি আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।

ইটাখোলা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বিল্লাল হোসেন বলেন, যাত্রীবাহী বাসের বেপরোয়া গতি ও লেন পরিবর্তনের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার ও আহতদের হাসপাতালে পাঠাই। চালক বাসটি নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূলতা এলাকায় রেখে পালিয়ে গেছে। পরে আমরা বাসটি আটক করি। চালকের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে আর শিল্পী পিয়ালের মরদেহ পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।