ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪০ বছর পর দেশে ফিরলেন কাজের সন্ধানে এসে আটকে পড়া নেপালি নাগরিক বীর 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৪
৪০ বছর পর দেশে ফিরলেন কাজের সন্ধানে এসে আটকে পড়া নেপালি নাগরিক বীর 

বগুড়া: ৪০ বছরের বেশি সময় আগে কাজের সন্ধানে এসে বাংলাদেশে আটকে পড়েছিলেন নেপালি নাগরিক বীর কা বাহাদুর রায়৷

অবশেষে নেপাল দূতাবাসের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বাংলাবান্ধা সীমান্ত হয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন তিনি।  
 

বীর বাহাদুর নেপালের ইলাম জেলার গোরখে বাঙ্গিনা এলাকার মৃত অধীর চন্দ্র রায়ের ছেলে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত হয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন তিনি। এর আগে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তাকে তার স্বজনদের (ভাতিজাসহ কয়েকজন স্বজন) কাছে হস্তান্তর করে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।  

এসময় উপস্থিত ছিলেন- তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি, নেপাল দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত মিস ললিতা সিলওয়াল, দ্বিতীয় সচিব মিস ইয়োজানা বামজান ও সেক্রেটারি অব অ্যাম্বাসেডর রিয়া ছেত্রি, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের উপপরিদর্শক (এসআই) ও ইনচার্জ অমৃত অধিকারী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা।  

জানা গেছে, কাজের সন্ধানে বাংলাদেশে এসে ঠিকানাবিহীনভাবে ঘোরাফেরার সময় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের একটি চাতালে আশ্রয় মেলে তার। ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি সেখানে থেকে কখনো চাতাল শ্রমিক হিসেবে, কখনো হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। কিন্তু এখন বয়স এতোটাই বেড়েছে যে সব কাজ আর ঠিক মতো করতে পারেন না।  

৭০ বছরের বৃদ্ধ বীর কা বাহাদুরকে তাই অন্যের করুণায় দিন কাটাতে হচ্ছিল। এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় স্থানীয় প্রশাসন।  

দীর্ঘদিন দুপচাঁচিয়ায় অবস্থান করা বীর কা বাহাদুর যখন এলাকা ছাড়েন, তখন এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়- একদিকে তাকে বিদায় দেওয়ার বেদনা, অন্যদিকে স্বজনদের কাছে তিনি ফিরতে পারছেন সেই আনন্দ। এদিকে দীর্ঘদিন পর নিজ দেশে ফিরতে গিয়ে মন খারাপ বীর কা বাহাদুরেরও। তিনি আবার ফিরে আসবেন বলে জানান স্থানীয়দের।

যে চাতালে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই চাতালের মালিক অলোক কুমার বসাক ও পুলক কুমার বসাক এবং তাকে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া স্থানীয় ফার্মেসি ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান খান ফরেন মিলে বীরের হাতে তুলে দেন নগদ ৭৫ হাজার টাকা।

এর আগে বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গিয়ে বীর কা বাহাদুরকে দেশে ফেরানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন নেপাল দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি উজানা বামজান।  

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন ললিতা শিলওয়াল ও একই দূতাবাসের অ্যাম্বাসিডরের সেক্রেটারি রিয়া ছৈত্রি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ছিলেন দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি ও দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার।  

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল ৯টার দিকে বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে বীর কা বাহাদুরকে নিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা বাংলাবান্ধা সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

দুপচাঁচিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নেপাল দূতাবাসের অ্যাম্বাসিডরের সেক্রেটারি রিয়া ছৈত্রি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর কা বাহাদুরের আটকে পড়ার খবর নজরে এলে উপজেলা প্রশাসন থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। ওই খবরে যে এলাকার কথা বলা হচ্ছিল, তা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। তারপরও নেপাল সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়। ওই জায়গার নামের সঙ্গে মিল খুঁজে বের করা হয় বীর কা বাহাদুরের নিজ জন্মস্থান। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত বাংলাবান্ধার কাছে নেপালের ইলাম জেলায় গোরখা বাঙ্গানা নামে একটি বাজারের সন্ধান মেলে। এরপর সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় বীরের বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে। তিনি ছবি দেখে নিশ্চিত করেন যে  বীর কা বাহাদুরই তার দেবর।  

তিনি জানান, বহুদিন আগে বীর কা বাহাদুর কাজের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফেরেননি। এরই মাঝে তার বড় ভাইও মারা গেছেন। বাড়ির অন্য সদস্যদের বীর কা বাহাদুরের কথা তেমন মনে নেই। পরিবার তার পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বুধবার তাকে ফিরিয়ে নিতে আসা নেপাল দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি উজানা বামজান জানান, বীর কা বাহাদুর রায় বাংলাদেশে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন। এখন তিনি নেপালে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। নেপাল সরকারের উদ্যোগে তাকে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীমান্তে তার পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে গ্রহণ করবেন। তাকে দেশে ফেরার জন্য সহায়তা করায় আমি দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সেই সঙ্গে নেপাল দূতাবাসের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ করার কারণে দুপচাঁচিয়ার বাসিন্দা মেহেদী হাসান খান ফরেনের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি জানান, বীর কা বাহাদুরের সংবাদ জানার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সে সময় তিনি নেপালে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি আবেদন করলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নেপাল দূতাবাস থেকে একটি প্রতিনিধি দল বীর কা বাহাদুরকে নিতে আসে।

দেশে ফেরার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বীর কা বাহাদুর জানান, ওরা বললো, আমি নেপালে গিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করে আবার ফিরে আসব। এখান থেকে যেতে ভালো লাগছে না। নেপালে তো আমার কিছুই নেই। আমি আবার কয়েকদিন পর এখানে চলে আসব৷

এদিকে বীর কা বাহাদুরের দেশে ফেরার কথা শুনে এলাকার অনেকেই ছুটে যান তাকে বিদায় জানাতে। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। দীর্ঘদিন এলাকায় থেকে স্থানীয়দের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন বীর কা বাহাদুর।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৪
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।