ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে ঘরছাড়া বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী, গ্রেপ্তার ২ শতাধিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৪
সিরাজগঞ্জে ঘরছাড়া বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী, গ্রেপ্তার ২ শতাধিক

সিরাজগঞ্জ: গ্রেপ্তার এড়াতে দুই সপ্তাহ ধরে ঘরছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ হাজারো নেতা-কর্মী। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

 

এদিকে, গত দুই সপ্তাহে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের প্রায় দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহিংসতা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া ছয় মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাতনামা এক হাজারেরও বেশি আসামি করা হয়েছে।  

জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরদিন ১৭ জুলাই বিকেল থেকে শহরের ইলিয়ট ব্রিজ, ইবি রোড, ইসলামিয়া কলেজ, হাসপাতাল রোড এলাকায় দফায় দফায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি এবং কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। ওইদিন রাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দেয়। প্রতিবাদে ১৮ জুলাই বিকেলে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেদিনও দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।  

পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুরের দিকে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এরপর কোটা আন্দোলনকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসব সংঘর্ষে অন্তত আটজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক
বিএনপি নেতা-কর্মী আহত হন। সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২০ জুলাই কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।  

পুলিশ জানায়, ফাঁড়িতে আক্রমণ, পুলিশের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচটি ও সদর উপজেলা বহুলী ইউনিয়নের মাহবুবুর রহমান মুক্তা নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করেন। এসব মামলায় জ্ঞাত ১৩০ জন ও অজ্ঞাতনামা ৯০০ জনেরও বেশি আসামি করা হয়।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ চারজনই বিএনপি ও ছাত্রদলের সমর্থক। এদের মধ্যে ইসলামিয়া কলেজ রোড বাদ্যকার পাড়া এলাকার গাজীর স্ত্রী বিএনপি সমর্থক শাহারবানুর দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া হোসেনপুর আটাপাড়া এলাকার স্বপনের ছেলে লিমন, ভাঙাবাড়ী মহল্লার সোহেলের ছেলে রিমন ও ধানবান্ধি মহল্লার ফজল মণ্ডলের ছেলে সেরাজুল ইসলাম। এছাড়াও ২০ জন গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। গ্রেপ্তারের পর নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।  

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। দলের নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। বাবা বিএনপি হলে তার সন্তানও ভয়ে ঘরে থাকতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত দলের ১৮০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তা এবং নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অযথা কাউকে হয়রানি করছি না। পুলিশের ওপর হামলায় যারা অংশ নিয়েছেন, ভিডিও দেখে দেখে তাদের গ্রেপ্তার করছি।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২০৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বিভিন্ন থানা পুলিশ। তবে সবদিনই পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।