ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্ব পর্যটন দিবসেও ফাঁকা বান্দরবান

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
বিশ্ব পর্যটন দিবসেও ফাঁকা বান্দরবান

বান্দরবান: বান্দরবানে কমছে পর্যটক। করোনার দীর্ঘ লকডাউন, কয়েকদিনের ব্যাপক বৃষ্টি, বন্যা আর সর্বশেষ পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের নানা অপতৎপরতার কারণে বান্দরবানে দিন দিন কমছে পর্যটক।

সর্বশেষ রাঙ্গামাটি আর খাগড়াছড়িতে সহিংসতায় এর প্রভাব পড়েছে বান্দরবান পার্বত্য জেলায়। বিগত বছরগুলো বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানে বেড়াতে এলেও এবছর বান্দরবানে পর্যটক নেই বললেই চলে। সবদিকে ফাঁকা আর শুনশান নীরবতা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

বান্দরবান জেলা শহরের পর্যটনকেন্দ্র মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে এখন পর্যটক না থাকায় শুনশান নিরবতা চলছে। নানা অস্থিরতা আর পার্বত্য এলাকায় সংহিসতার সংবাদে কমেছে পর্যটক।

এদিকে পর্যটক না থাকায় জেলার হোটেল-মোটেল আর গেস্ট হাউজগুলোর মালিক ও কর্মচারীরা প্রতিদিন গুনছে লোকসান। বান্দরবান সদরের আবাসিক হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ব পর্যটন দিবসে বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আসতো আর তাদের সেবা দিতে হোটেল-মোটেলগুলো হিমশিম খেতো। তবে এবছর পর্যটক নেই বান্দরবানে। হোটেলের রুমগুলো ফাঁকা আর পর্যটক না থাকায় ক্ষতির মুখে সংশ্লিষ্ট মালিকরা।

আবাসিক হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক মো. জাফর বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসা দিন দিন ধ্বংসের মুখে পড়ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ লকডাউন, কয়েকদিনের ব্যাপক বৃষ্টি, বন্যা আর সর্বশেষ পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের নানা অপতৎপরতার কারণে বান্দরবানে দিন দিন কমছে পর্যটক। সর্বশেষ রাঙ্গামাটি আর খাগড়াছড়িতে সহিংসতায় এর প্রভাব পড়েছে বান্দরবানে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসা ধীরে ধীরে গুটিয়ে পড়বে।

এদিকে পর্যটক কমে যাওয়ায় জেলার পর্যটকবাহী প্রায় ৪৫০টি ট্যুরিস্টবাহী যানবাহনের চালক আর শ্রমিকেরা পড়েছে চরম বিপাঁকে। ভাড়া না থাকায় অনেকে বিক্রি করছে নিজের গাড়ি। পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে।

ট্যুরিস্টবাহী যানবাহনের চালক মো. ফরিদ জানান, বান্দরবানে পর্যটক নেই আর ট্যুরিস্টবাহী যানবাহনগুলো একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পর্যটকের অভাবে বান্দরবানে ট্যুরিস্টবাহী যানবাহনের চালক আর শ্রমিকেরা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছে, আর অনেক মালিক তাদের গাড়ি আর লাইন বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ে গজিয়ে উঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে দুই বছর ধরে বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছে। এরমধ্যে সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ নেমে আসে এখানকার পর্যটন শিল্পে। সবদিক মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক জীবনধারা।

টুরিস্ট পুলিশ, বান্দরবান জোনের ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, টুরিস্ট পুলিশ, বান্দরবান জোন সর্বত্র বান্দরবানে আগত পর্যটকদের সেবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে আসে আর তাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে নিয়ম মাফিক কাজ করা হচ্ছে। জেলার নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক আর প্রান্তিক লেকসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।  

তিনি আরও জানান, যেসব পর্যটক বান্দরবানে ভ্রমণে আসছেন তাদের নিরাপত্তায় ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বান্দরবান শান্তি সম্প্রীতি আর পর্যটনমুখর একটি জেলা। এই জেলা পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।