ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আন্দোলনে চোখ হারালেন মোস্তফা, অর্থাভাবে বন্ধ চিকিৎসা

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৪
আন্দোলনে চোখ হারালেন মোস্তফা, অর্থাভাবে বন্ধ চিকিৎসা মোস্তফা মিয়া

হবিগঞ্জ: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন হবিগঞ্জের মোস্তফা মিয়া (৩০)। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তার চিকিৎসা।

 

বিদেশে চিকিৎসার মাধ্যমে মোস্তফার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে প্রয়োজন ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু এতগুলো টাকা যোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে তাই দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন আন্দোলনে চোখ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া নির্মাণ শ্রমিক মোস্তফা।

গুলিবিদ্ধ মোস্তফা হবিগঞ্জ পৌরসভার আলমপুর এলাকার কৃষক মো. আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে। গত ৪ আগস্ট হবিগঞ্জ জেলা শহরের টাউন হল রোডে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে আহত হন তিনি। আহতাবস্থায় প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তার চোখের ভেতরে ও বাইরে দুটি, কপালের ডান দিকে, নাকের বাম পাশে ও গালে একটি করে শরীরে মোট পাঁচটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চোখের বাইরের বুলেটটি অপসারণ করা হয়; বাকিগুলো এখনও ভেতরে বিদ্ধ।

মোস্তফা জানান, বুলেট বিদ্ধ বাম চোখটি পুরোপুরি অকেজো, কিছু দেখতে পান না। দেশের চিকিৎসায় চোখ ফিরে পাওয়া অসম্ভব; বিদেশে চিকিৎসা করালেও খরচ পড়বে ১৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি কয়েকটি পরীক্ষা ও বিদেশে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়ে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তাকে বিদায় দেওয়া হয়।

বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে কথার এক পর্যায়ে টাকার অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে পারছেন না জানিয়ে চোখের চশমা খুলে জল মুছতে থাকেন মোস্তফা।  

তিনি বলেন, ‘ঘরে খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকা নেই। চিকিৎসার কথা ভাবতেই পারি না। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে টাকা ছাড়া পরীক্ষাগুলো করানোর জন্য গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’ 

মোস্তফা আরও বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দামে অতিষ্ঠ হয়ে শান্তির জন্য আন্দোলনে গিয়ে এখন চোখ হারিয়ে বুলেটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। রোজগার নেই, পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।  

মোস্তফার মা মোছা. রিনা বেগম (৪৮) জানান, তার স্বামী-স্ত্রী ও আট সন্তানের সংসার। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় ভাইয়ের আলাদা সংসার, দুই ভাই প্রতিবন্ধী। তাদের বাবা বয়সের ভারে কাজে যেতে পারেন না। মোস্তফাই ছিলেন সংসারের খাবার যোগানোর একমাত্র উপায়।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনের দয়ায় কোনো রকম আছি। আমার পোলাডা রাজমিস্ত্রির কামলা দিত। আন্দোলনে গিয়া গুলি লাগনে চোখের যন্ত্রণায় শুধু কাতরায়। ওষুধ শেষ, সরকার একটা পয়সা সাইয্য (সাহায্য) দিল না। ’

মোস্তফার বাবা মো. আব্দুল্লাহ মিয়া জানান, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই দফায় মোস্তফাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি। দুই মাসের চিকিৎসায় প্রায় তিন লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। পাওনাদাররা এখনই টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। নতুন করে কেউ ঋণ দিচ্ছে না। এজন্য মোস্তফার চিকিৎসা বন্ধ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।