ঢাকা: শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবারের বেশিরভাগ শিশুরাই নানাভাবে মানসিক নির্যাতনে ভোগে। এর অধিকাংশই পরিবার থেকে আসে।
শিশুদের প্রতি এই নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন মিরপুরের নামা বস্তির বাসিন্দা আবদুর রহমান। তিনি সিবিসিপিএম (কমিউনিটি-বেসড চাইল্ড প্রটেকশন মেকানিজম) প্রকল্পের অধীনে চাইল্ড প্রটেকশন ফোরাম লিডার হিসেবে কাজ করছেন।
আবদুর রহমান বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে যাদের পড়াশুনার সুযোগ দেওয়া হয় তাদের বাইরে কোনো ছেলে বিরক্ত করলে পরিবার সেই কথা গোপন রাখে। একই সঙ্গে অনেকের পড়াশোনাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দারিদ্রতার কারণে বাল্যবিয়েও দেওয়া হয়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, টেরেডোস হোম ও ভার্কের আয়োজনে শিশু সুরক্ষার বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সমাধানের উপায় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে শ্রমজীবী পরিবারে শিশুদের নানান সমস্যা তুলে ধরা হয়। গাজীপুর থেকে আসা শিশু শীলা বলে, আমাদের মা-বাবা কাজের সময় আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। গার্মেন্টস এলাকাগুলোতে যদি ডে কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হয়, তাহলে ছোট শিশুরা নিরাপদে থাকতে পারবে।
শিশুদের মতে, স্কুলে যাতায়াত এবং খেলার সময় অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া বাল্যবিয়ে আমাদের জীবনের বড় বাধা। এটি বন্ধ হলে আমরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারব, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারব।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টেরেডোস হোম কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির, ভার্কের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাসুদ হাসান, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রোকসানা আক্তার, সাংবাদিক রাবেয়া বেবি, বিজিএমইএর সহকারী সচিব মো. আদনান প্রমুখ।
মাহমুদুল কবির বলেন, শিশু সুরক্ষার বিষয়টি শুধু একটি মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বাল্যবিয়ে, শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা, অনলাইনে হয়রানি, এবং ঝরে পড়া শিশুদের বাস্তবতা আমাদের সমাজে যে সংকট তৈরি করছে, তা নিরসনে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাংবাদিক রাবেয়া বেবি বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে দুইটা জিনিস খুব আশঙ্কাজনক। বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম যে দুইটার কোনোটাকেই কমানো যাচ্ছে না। করোনাকালে আমরা দেখলাম শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে আবারও বেড়ে গেছে। কোনো অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারছি না।
এ সময় শিশুদের সুরক্ষায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো, কন্যা শিশুদের জন্য শিক্ষা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, গার্মেন্টস কর্মীদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ স্কুল, খেলার জায়গা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কমিউনিটি ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে অভিভাবক ও শিশুদের সচেতনতা বাড়ানো, যাতে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
টিএ/আরআইএস