ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নানার ভাষ্য

খুন হওয়ার আগে ছোট্ট মুসার আকুতি, ‘বাবা মাইরো না’

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
খুন হওয়ার আগে ছোট্ট মুসার আকুতি, ‘বাবা মাইরো না’ রোহান মোল্লা, মুসা মোল্লা ও ডানে সেই বাসা

ঢাকা: গত ১৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর বাগেরটেক এলাকায় জন্মদাতার হাতে খুন হয় রোহান মোল্লা (৭) ও মুসা মোল্লা (৩)। ঘাতক বাবা আব্দুল আহাদ মোল্লা গলায় ছুরি চালানোর আগে ছোট্ট মুসার আকুতি ছিল ‘বাবা মাইরো না, আর করবো না।

পুলিশ জানায়, ঘাতক বাবা আহাদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি এখনও কথা বলতে পারেন না। কারাগারে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।  

এ বিষয়ে সোমবার (২ ডিসেম্বর) পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘাতক বাবা আহাদ এখন কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তিনি ওখানে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে আসবো।

কী কারণে দুই সন্তানকে হত্যা- জানতে চাইলে ওসি বলেন, আসামি আহাদ ঋণগ্রস্ত। পাশাপাশি তার স্ত্রী রোজিনা বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। সেটা আহাদ মেনে নিতে পারেননি। অনেকবার স্ত্রীকে বারণ করেছেন এসব কাজ না করার জন্য। কিন্তু স্বামীর কথা শোনেননি স্ত্রী রোজিনা। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। ঋণগ্রস্ত ও সাংসারিক এসব ঝামেলা নিয়ে মানসিক অশান্তিতে ছিলেন আহাদ। এ কারণে দুই শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিজেই গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

পুলিশ জানায়, গত ১৬ নভেম্বর রোজিনা পল্লবী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামী আহাদ পল্লবীর মানিকদী গ্রিন হ্যাভেন বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকরি করেন। গত ১৬ নভেম্বর আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই সন্তান রোহান ও মুসাকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে বিছানার ওপর ফেলে রাখেন আহাদ। এ সময় তার বৃদ্ধ বাবা জাবেদ আলী বাসায় ছিলেন। তিনি রোহান ও মুসাকে হত্যার দৃশ্য দেখে চিৎকার করলে আহাদ নিজেও তার গলায় ছুরি চালান। সন্তানদের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকেও অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইশারায় কথা বলছেন। সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার দিন (গত ১৬ নভেম্বর) শিশুদের নানা জাবেদ আলী পাশের ঘরেই ছিলেন। তিনি বলেন, পাশের ঘরেই দুই ছেলেকে নিয়ে ছিল আহাদ। হঠাৎ আমি কান্নার শব্দ পাই। ছোট ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ‘বাবা মাইরো না, আর করবো না। ’ তিনি তখনো বুঝতে পারেননি আহাদ নিজের ছেলেদের এভাবে হত্যা করছে।  

জাবেদ আলী বলেন, বিছানা থেকে উঠে হামাগুড়ি দিয়ে পাশের ঘরে যেতে তার দুই-তিন মিনিট সময় লাগে। গিয়ে দেখেন দুই নাতির গলাকাটা মরদেহ বিছানায়। আহাদও বিছানায় শোয়া, রক্তাক্ত। এরপর তিনি চিৎকার দিয়ে রাস্তায় যান। মানুষজন ডাকেন। লোকজন তখন পুলিশে খবর দেয়।

জানা যায়, আহাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। তার স্ত্রী রোজিনার বাড়ি নেত্রকোনা। আহাদের এটি তৃতীয় ও রোজিনার দ্বিতীয় বিয়ে।  

রোজিনা বলেন, আহাদের অনেক টাকা ঋণ আছে। পাওনাদাররা চাপ দিলে তিনি প্রায়ই তার কাছে টাকা চাইতেন। তবে গত কয়েকদিন তাদের কোনো ঝগড়া হয়নি।

দুই ছেলেকে হত্যার আগে দোকান থেকে রুটি ও ফলের রস (জুস) এনে খাওয়ান আহাদ। প্রতিবেশী তাহমিনা নামে এক নারী জানিয়েছেন, সন্তানদের খুব ভালোবাসতেন তিনি। কখনো মারধর করতে দেখেননি।

বাড়িওয়ালা মো. নাসির বলেন, দুই মাস ধরে আমার বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন আহাদ ও রোজিনা দম্পতি। আহাদ তিনটা বিয়ে করেছে। তার পারিবারিক সমস্যা রয়েছে বলে জেনেছি। তবে কেন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।

আরও পড়ুন...
দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা, এখনো শঙ্কামুক্ত নন সেই বাবা 
দুই সন্তানকে গলাকেটে হত্যা: সংসারে অভাব না অন্যকিছু?
মিরপুরে দুই ছেলেকে গলা কেটে হত্যার পর বাবার আত্মহত্যার চেষ্টা

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৪
এমএমআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।