ঢাকা: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকার কারণে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
শনিবার (৮ মার্চ) ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ক সংলাপে’ এসব কথা বলেন বক্তরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি (সিপা)।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউল ইসলাম। সিপা’র প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সচিব প্রফেসর ড. শরিফুল আলমের সঞ্চালনায় সংলাপে আরো অংশ নেন দৈনিক প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, নিরপাদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, বিএনএনআরসি’র সিইও এ এইচ এম বজলুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সাওয়াব এর প্রেসিডেন্ট এসএম রাশেদুজ্জামান, সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সাবেক সচিব মোহাম্মাদ আবদুল কাইয়ূম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাকেব অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার রাশেদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জনাব আব্দুল হক, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক সবুজ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রফেসর ড. শাফিউল ইসলাম বলেন, তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছাড়া, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনই অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে পারে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কার্যকর না থাকলে জনগণ শুধু সেবা থেকে বঞ্চিত হয় না বরং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বিযুক্ত থাকে।
তাই তিনি দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সরকারকে পরামর্শ দেন।
সংলাপে অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল কাইয়ূম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করা দরকার। স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে না পারলে জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠু করা যাবে না। বর্তমানে আমাদের প্রশাসনিক যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, অতীতে কিন্তু এমন সমস্যা দেখা দেয়নি। পুলিশকে এখন আর কার্যকরী প্রতিষ্ঠান আর বলা যায় না। সাধারণ প্রশাসন যারা নির্বাচনের মূল ভূমিকা পালন করবে, তারা যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে এটা আশা করা যায় না।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এই সরকারেরও সময় শেষ হয়ে আসছে। ডিসেম্বরে তারা নাকি নির্বাচন দেবে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি, কোনো সংস্কার আসেনি। তারাই তো ইলেকশন করবে। নতুন পার্টি যেটা গঠিত হয়েছে, তাদের মধ্যেও কোনো পরিবর্তন দেখিনি। আমরা শুনছি, নতুন পার্টিও চাঁদাবাজি করছে। রোজগারের ব্যবস্থা যে সিস্টেমের ছিল, সেভাবেই চলছে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচন আগে হওয়া উচিত। আগে হলে অনেক উপকার হবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে একটা দ্বৈততা এসে হাজির হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ছাত্রদের যে দল রয়েছে সেটি মানুষকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে নিক্ষিপ্ত করেছে। বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে মানুষ স্থানীয় নির্বাচন আগে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর এ নিয়ে মত পার্থক্য আছে। আমাদেরকে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এবং মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী স্থানীয় নির্বাচন আগে হতে হয়। তবে, সংস্কার করে সবকিছু করতে হবে।
অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) ড. খন্দকার রাশেদুল হক বলেন, যাদের মাধ্যমে সমাজ এগিয়ে যাবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে, সে ধরনের একটা প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন। যে জিনিসটি এই জাতির জন্য উপকারী এবং জাতিকে একটা সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবে সেসমস্ত লোককে নির্বাচিত করা দরকার বলে আমি মনে করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৫
এসসি/এমএম