খুলনা: খুলনায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট হয়ে উঠেছে ইজিবাইক। ইজিবাইক ছিনতাই করতে তারা চালককে হত্যা করতেও দিধা করছেন না।
সোমবার (১০ মার্চ) রাত ১১টার দিকে নগরীর খালিশপুর হাউজিং এলাকার হাফিজিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা গলির ভেতরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এক ইজিবাইক চালককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে এ চক্রটির সদস্যরা। চালকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন বের হয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহত ইজিবাইক চালক জাহাঙ্গীর দিঘলিয়া উপজেলার ফরমেশ খানা এলাকার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় মশিউর রহমান সাগর নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটক মশিউর খালিশপুর থানা এলাকার আফজালের মোড় এলাকার আফজালের বাড়ির ভাড়াটিয়া রুস্তুম আলীর ছেলে।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে মশিউর রহমান সাগরকে আটক করে স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। পলাতক ব্যক্তিরা ইজিবাইক ছিনতাইকারী গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে বটিয়াঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইজিবাইক চালক মো. হাফিজুল ইসলামের (৫০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে তার গলা কেটে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। হাফিজুল ইসলাম খুলনা মহানগরীর খালিশপুর এলাকার মৃত খাদেমুল ইসলামের ছেলে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বটিয়াঘাটা-গাওঘরা সড়কের বটিয়াঘাটা কালভার্ট সংলগ্ন মাছের ঘেরের পাশে হাফিজুলকে গলা কেটে হত্যা করে মরদেহ ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর ইজিবাইকটি নিয়ে যায় তারা। শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
বটিয়াঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
বটিয়াঘাটায় ইজিবাইক চালক হত্যা মামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। পুলিশ এ সময় ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক সহ বেশ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা জেলা ডিবি পুলিশ এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে বাগেরহাট জেলার আসামিদের নিজ বাড়ি থেকে হত্যার সাথে জড়িত মামলার অভিযুক্ত খালিশপুর পিপলস কলোনীর মোঃ মতিয়ার রহমান এর ছেলে মোঃ হাসান নকিব (৪২) ও পাইকগাছা উপজেলা সনাতন কাটি এলাকার আমজেদ গাজীর মেয়ে রেশমা খাতুনকে (৩২) আটক করে। আসামীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ইজিবাইক সহ বাইকের পাঁচটি ব্যাটারি ও একটি চাপাতি।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এসব ছিনতাইয়ের শিকার অনেকেই আবার ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন ইজিবাইক। ফলে পরিবারগুলোকে স্বজন হারানোর শোকের সঙ্গে বয়ে বেড়াতে হয়েছে ঋণের বোঝাও। মূলত অর্থনৈতিক কারণে ঘটছে এসব হত্যাকাণ্ড। ইজিবাইকের প্রতিটি যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে খুব সহজেই বিক্রি করা যায় বলেই ছিনতাইয়ে আগ্রহ বেশি ছিনতাইকারীদের।
এ অবস্থায় সড়কে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের খুলনা মহানগর শাখার নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
এমআরএম