ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক যশোরের সামছুদ্দিনের গল্প

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক যশোরের সামছুদ্দিনের গল্প

যশোর: ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৯৪৫ সালে, আজ থেকে ৮০ বছর আগে।

ফলে যুদ্ধের সৈনিকদের অধিকাংশই যে আর জীবিত নেই, তা বলাই চলে। যারা এখনও জীবিত, তাদের খবরই বা রাখেন ক’জন। তেমনই একজন যশোরের মো. সামছুদ্দিন।

অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল মো. সামছুদ্দিন বাস করছেন যশোর শহরের পুলিশ লাইন টালি খোলায় মেয়ের বাড়িতে। সদর উপজেলার দোগাছিয়ায় স্থায়ী আবাস হলেও প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ বাড়িতে থাকেন না। সেখানে তার ছেলেরা থাকেন। তার বর্তমান বয়স ১০১ বছর।

সোমবার (১৭ মার্চ) জেলা সশস্ত্র বোর্ডের এক সভায় গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশের যে সাতজন জীবিত আছেন, তাদের মধ্যে মো. সামছুদ্দিন অন্যতম।

সংবাদটি জানার পর জেলা প্রশাসক এ সৈনিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। সোমবার বিকেলে তিনি ছুটে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ সৈনিকের বাড়িতে। সেখানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ঈদ উপহার হিসেবে তার হাতে তুলে দেন নগদ কিছু টাকা এবং কিছু সামগ্রী। বেশ কিছুক্ষণ জেলা প্রশাসক তার সান্নিধ্যে কাটান।

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ল্যান্স কর্পোরাল মো. সামছুদ্দিন এক জীবন্ত ইতিহাস। তিনি রণাঙ্গনের যোদ্ধা হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে সে সময়কার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের সব কিছুই তার জানা। এমন একজন মানুষ এ শহরে (যশোর) অবস্থান করেন এটা খুবই গর্বের বিষয়।

জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ল্যান্স কর্পোরাল সামসুদ্দিন কর্মজীবনে ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। তিনি বিরল সম্মানের অধিকারী।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, এ বীরের জন্ম ১৯২৪ সালের জুনে মাদ্রাজে। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে তিনি ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগদান করেছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল-পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ বীরযোদ্ধা।

স্মৃতি রোমন্থন করে ল্যান্স কর্পোরাল মো. সামছুদ্দিন জানান, যুদ্ধ চলাকালে একবার সিঙ্গাপুরে তিন হাজার সহযোদ্ধাসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সে অবস্থায়ই টানা তিন মাস যুদ্ধ চালিয়েছিলেন তারা। বিশ্বযুদ্ধের পরও সেনাবাহিনীর চাকরিতে ছিলেন তিনি।

নাতি বোরহান জানান, বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে এখনো ব্রিটিশ সরকারের ভাতা পাচ্ছেন ল্যান্স কর্পোরাল সামছুদ্দিন। তবে তা খুবই অপ্রতুল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তিনি যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। পরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে চলে আসেন। যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। এর কিছুকাল পর অবসরে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ লড়াকু যোদ্ধা।

মো. সামছুদ্দিনের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। স্ত্রী জাহেদা খাতুন মারা গেছেন ১৯৯৯ সালে। ব্রিটিশ সরকার থেকে প্রতি তিন মাস পরপর পাওয়া ভাতা আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে পাওয়া পেনশনে তার টুকটাক খরচ নির্বাহ করা হয়। মেয়ে-জামাতাই তার অবলম্বন এখন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।