ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘কালো সোনা’ চাষে আগ্রহী কুষ্টিয়ার কৃষকরা

মো: জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
‘কালো সোনা’ চাষে আগ্রহী কুষ্টিয়ার কৃষকরা পেঁয়াজের বীজ

কুষ্টিয়া: কৃষিতে ‘কালো সোনা’ বলা হয় পেঁয়াজের বীজকে। মৌসুমে বাজারে দাম ও চাহিদা বেশ ভালো থাকে পেঁয়াজ বীজের।

চাষি পর্যায়ে উন্নতমানের ও ভালো জাতের পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কুষ্টিয়ার খোকসা, কুমারখালী, সদর ও মিরপুরের চাষিরা।  

বীজকে কালো সোনা বলা হলেও পেঁয়াজের ফুল সাদা বর্ণের ও শোভা বর্ধক। মাঠে যখন পেঁয়াজের ফুল ফোটে এবং বাতাসে সেগুলো দোল খায় তখন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। । পেঁয়াজ থেকে বীজ উৎপাদন ব্যয়বহুল হলেও লাভ বেশি হওয়ায় দিনদিন এ বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। যা থেকে কৃষি বিভাগ আশা করছে প্রায় ৫০ দশমিক ০৪ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে।
আবাদের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় ২৭ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২৪ হেক্টর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৪ হেক্টর এবং মিরপুর উপজেলায় ১ হেক্টর।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের কৃষক আবু তালেব। এ বছর তিনি তিনটি স্থানে প্লট আকারে ১৯ বিঘা জমিতে সুপার কিং, লালতীর কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন।

আবু তালেব জানান, চলতি বছরে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে ৩৮ থেকে ৪০ মণ বীজ উৎপাদন হবে। এর বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪২ লাখ টাকা। খরচ বাদে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা মুনাফা সম্ভব হবে।

রোপণ করা পেঁয়াজ, পরিচর্যা, জমির ইজারাসহ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সব মিলে ১৯ বিঘা জমিতে বীজ চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ১৮-২০ লাখ টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে দুই মণ করে ১৯ বিঘায় ৩৮-৪০ মণ ফলনের প্রত্যাশা তার। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকায়।

গত বছর ১১ বিঘা জমিতে প্রায় ১৮ মণ বীজ উৎপাদন করে প্রায় ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

একই এলাকার কৃষক করিম মণ্ডল জানান, আবু তালেব তার জমি ইজারা নিয়ে বীজ চাষাবাদ করছেন। গাছ ও ফুল ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হলে আগামী বছর ১০ কাঠা জমিতে তিনিও এমন চাষাবাদ করবেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা মাঠপাড়া (তিতুতলা) এলাকার সড়কের দুই ধারে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছেন চাষিরা। যা দেখতে আশপাশের লোকজনও ভিড় করছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন ভালো হলে আগামীতে এ এলাকায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন বাড়বে।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম জানান, কুমারখালীতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আবু তালেবসহ আরও অনেকে। উপজেলায় কৃষকদের বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বীজ উৎপাদন বাড়লে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন খুবই লাভজনক। জেলাজুড়ে পেঁয়াজ বীজের চাহিদা রয়েছে। বাইরের জেলা থেকে আমদানি করা লাগে। কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন বাড়লে বাইরে থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।