ঢাকা, বুধবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘চোর’ সন্দেহে পিটুনি, প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
‘চোর’ সন্দেহে পিটুনি, প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় চোর সন্দেহে একজনকে পিটুনির সময় প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে সহোদর দুই ভাই নিহত হয়েছেন।  

সোমবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার ভাগদী গ্রামের কুড়াইতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পলাশ উপজেলার কর্তাতৈল এলাকার আশ্রাফ উদ্দিনের ছেলে রাকিব (২৫) এবং সাকিব (২০)। এসময় পিটুনিতে আহত হয়েছেন নিহতদের বাবা আশ্রাফ উদ্দিন ও মা রাবেয়া বেগম।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার ভোরে ভাগদী গ্রামের কুড়াইতলী এলাকায় দুই যুবক অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি করতে যায়। এসময় টের পেয়ে এলাকার লোকজন হিমেল নামে এক যুবককে ধরে ফেললেও আরেকজন পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।  

এ ঘটনা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় কর্তাতৈল এলাকার বাসিন্দা রাকিব, সাকিবসহ অন্যান্যরা। এসময় তারা ভাগদী এলাকার এক অটোরিকশাচালককে মারধর করে। পরে সন্ধ্যায় আবার ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক ভাগদী এলাকায় গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় তাদের আটক করে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত দুই ভাইকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাকিবের মৃত্যু হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যায় বড় ভাই রাকিব।

তবে স্বজনদের দাবি চোর নয় চাঁদা না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের চাচি হাজেরা বেগম বলেন, এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আজকে ঈদের দিন ঘুরতে গেলে সন্ত্রাসীরা সাকিব ও রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুদীপ কুমার সাহা বলেন, সাকিব ও রাকিব নামে দুই ভাইকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে সাকিবকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। আর রাকিবের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে পথেই সে মারা যায়। তাদের মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে একজনকে ভোরে পিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুনরায় পিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন সদর হাসপাতালে এবং অপরজন ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায়। আমরা চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পাইনি। তবে তদন্ত করে দেখছি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না।

বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।