বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে নতুন করে উপস্থাপন করেছে ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব। এ আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনের সামাজিক সংহতির এক অনন্য উদাহরণ।
আজও তারা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য সোচ্চার রয়েছে। তবে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ছাড়া জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়। গতকাল ঢাকার পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক সংহতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কমিটি ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিএডিএফ) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালায় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ জুলাই-পরবর্তী শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সব ধর্ম ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আকিজ পাইপসের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই সংহতি সভায় ধর্মীয় প্রধান, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র ও তরুণ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০০ জন দেশি-বিদেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। আকিজ পাইপসের সিইও ও তরুণ ব্যবসায়ী সেখ আজরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল্লামা মামুনুল হক, আর্চ বিশপ ক্যাথলিক বিজয় এন ডি’ক্রুজ, হিন্দু মহাজোটের গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথেরো, বুদ্ধানন্দ মহাথেরো, ক্যাথলিক চার্চ ইন্টারফেইথের কনভেনার সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি’কস্তা, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ প্রমুখ। সভায় বক্তারা ফিলিস্তিনে চলমান নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। বক্তারা বলেন, সম্প্রীতির সবচেয়ে বড় বাধা হলো অন্য ধর্মের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার অভাব। ইতিহাসে মানুষ একত্র হয়েছে, কিন্তু একে অন্যকে যখন সমমর্যাদার মনে করেনি তখনই সমাজ ব্যর্থ হয়েছে।
সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনোই অন্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে না। দুঃখজনকভাবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়েও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। মব সৃষ্টি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিগৃহীত করার সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াতেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিনের দাবি যেমন, অর্পিত সম্পত্তি, সংসদের সংরক্ষিত আসন ইত্যাদি বিষয়ে নতুন-পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। তারা আরও বলেন, যে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি নিপীড়ন অন্য ধর্মের সমাজকেও আক্রান্ত করে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো সমাজ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য অন্য ধর্মের আচার, উৎসব ও প্রথার প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা জরুরি। নিজেদের ভিতরে ঐক্য না থাকলে দেশে-বিদেশের কুচক্রী মহল আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।
জাতীয় মুক্তি আর ত্যাগের অর্জনকে ধরে রাখতে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং সামাজিক সংহতিকে সুদৃঢ়করণের বিকল্প নেই। এটি বর্তমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এখানে ধর্মীয় ঐক্য বিনষ্ট করা আর বিভেদ হানাহানি সৃষ্টির সব প্রচেষ্টা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসআই
Shimul