ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

সংকট নিরসনে ৯ দাবি কোরিয়া ভিসাপ্রত্যাশীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৭, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
সংকট নিরসনে ৯ দাবি কোরিয়া ভিসাপ্রত্যাশীদের

ঢাকা: দক্ষিণ কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রোস্টারভুক্তির পর ‘ডিলিট’ হওয়া এবং দীর্ঘদিন অপেক্ষমাণ কর্মীদের পুনরায় রোস্টারভুক্ত করা ও ভিসা ইস্যুর দাবিতে ৯ দফা উপস্থাপন করেছেন ইপিএস ভিসাপ্রত্যাশীরা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় রোস্টারভুক্ত সকল ভিসাপ্রত্যাশীগণের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি উত্থাপন করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ইপিএস কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয় এক যুগেরও আগে, কিন্তু এখনও এই কর্মসূচি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ। কর্মীদের কোরিয়ায় পাঠানোর সব দায়িত্ব বোয়েসেলের হওয়ার কথা থাকলেও, প্রতিষ্ঠানটির অপেশাদার আচরণ, গবেষণাহীন পরিকল্পনা এবং অনিয়মতান্ত্রিক রোস্টার ব্যবস্থাপনার ফলে প্রায় ২১ হাজার তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন আজ অনিশ্চয়তার মুখে।

তারা অভিযোগ করেন, রোস্টারভুক্ত হয়েও বহু আবেদনকারীর ফাইল কোরিয়ায় পাঠানো হয়নি। বরং নতুন নতুন সার্কুলার প্রকাশ করে কর্মীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে, যা পুরনোদের প্রতি চরম অবিচার। ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রোস্টারভুক্ত হয়েও অনেকে আজ বেকার অবস্থায় দিন পার করছেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ভাষা শিখেছি, রোস্টারভুক্ত হয়েছি, অথচ আমাদের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বোয়েসেলের এই অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দ্রুত সমাধান চাই। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কোরিয়া ভিসাপ্রত্যাশীরা তাদের চলমান সংকট নিরসনে নিম্নোক্ত ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন:

১. পুনঃরোস্টার ও ডিলিট বন্ধ:
২০২২ সাল থেকে যেসব কর্মী ডিলিট হয়েছেন বা ভবিষ্যতে হবেন, তাদের রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে পুনঃরোস্টার করতে হবে। পাশাপাশি, ২০২৩ সালের এবং পরবর্তীকালের সকল রোস্টারভুক্ত কর্মীদের ডিলিট না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

২. ফাইল প্রেরণ ও সিরিয়াল মেনে কোম্পানি বরাবর পাঠানো:
দুই বছরের মধ্যে অন্তত ৭–৮ বার, ১০টি ইস্যুর আওতায় কোম্পানির মালিকদের কাছে রোস্টারভুক্ত কর্মীদের ফাইল বাধ্যতামূলকভাবে প্রেরণ করতে হবে এবং তা সাল ও সিরিয়াল অনুযায়ী হতে হবে।

৩. সার্কুলার বাণিজ্য বন্ধ:
বর্তমান রোস্টারভুক্ত কর্মীদের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫-৮৫ শতাংশ কর্মী কোরিয়ায় প্রবেশ না করা পর্যন্ত নতুন কোনো সার্কুলার প্রকাশ বা সার্কুলার বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে হবে।

৪. কোরিয়ার জোনভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ:
প্রত্যেক বানিজ্যিক জোনে কমপক্ষে ৪-৫ জন করে নিয়োজিত এজেন্ট থাকতে হবে, যারা প্রতিটি ইস্যুর আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে গিয়ে মালিকদের উৎসাহিত করে ইস্যু নিশ্চিত করবেন।

৫. আর্থিক লেনদেনমুক্ত ইপিএস ব্যবস্থা:
বাংলাদেশ ইপিএস ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেনমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বোয়েসেল/এইচ.আর.ডি কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকলে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৬. দক্ষতা উন্নয়ন ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চয়তা:
নতুন খাত ও সেক্টর চিহ্নিত করে রোস্টারভুক্তদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় কোরিয়ায় তাদের বৈধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, বেসরকারিভাবে কেউ যেন কোরিয়ায় প্রবেশ না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক ভিসা ইস্যুর সময়সীমা:
মৎস্য, নির্মাণ ও শিপবিল্ডিং খাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোস্টারভুক্ত কর্মীদের ভিসা ইস্যু করতে হবে। রোস্টারবিহীন কাউকে এসব খাতের ভিসা ইস্যু করা যাবে না। প্রয়োজনে খাত পরিবর্তন করে হলেও রোস্টারভুক্তদের ভিসা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. কোরিয়ায় কর্মী রিলিজে দূতাবাসের সক্রিয় ভূমিকা:
কোনো কর্মী কোরিয়ায় কোম্পানি পরিবর্তন বা রিলিজ নিতে চাইলে, বাংলাদেশ দূতাবাসের এজেন্টকে স্বশরীরে কোম্পানিতে গিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

৯. বোয়েসেলের কাঠামোগত সংস্কার:
চলমান সংকট দ্রুত সমাধানে বোয়েসেল ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বোয়েসেলকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল দিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে।

ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।