ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারায় সড়ক ও সেতু

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধারায় সড়ক ও সেতু

ঢাকা:  স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়ে গেলো। আর সব কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে মেট্রোরেলের।

দ্রুত চলাচলের সড়ক এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের কাজও এগোচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনে উন্নীত হয়ে যাচ্ছে। এখন শুরু হচ্ছে সব সড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ। আর ব্রিটিশ আমলের যেসব আইনে চলছিলো সড়ক ও পরিবহন তা থেকে বেরিয়ে নতুন দু’টি আইনও প্রস্তুত প্রায়।

দেশের সড়ক ও পরিবহন খাত ২০১৫ সালকে তাই বলা যায় উন্নয়নের স্রোতধারায় বহমান। যে স্রোতের মিলন হবে ২০১৮-১৯-২০ সালের দিকে।

এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই বলছেন, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার পর ২০১৮-১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগে এক বৈপ্লবিক পরিবতনের সূচনা হবে। আমরা এখন সেই পথেই আছি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন রাস্তা নির্মাণ কাজসহ বছরজুড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।   নতুন নতুন রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও সেতু নির্মিত হয়েছে কয়েকশ’।

পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
উদ্বোধন হয়ে গেলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ।
দেশের অর্থায়নে নির্মাণ শুরুর পর এখন সেতুর অগ্রগতি প্রায় ৩০ শতাংশ। চলছে মূল সেতুর পাইলিং কাজ। তার স্প্যান বসিয়ে সেতু চালু হবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।

এর মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় বড় সেতুর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা পদ্মানদীর ওপর সেতু গড়ার অভূতপূর্ব রেকর্ড বাংলাদেশের ঘরে তুলছে বাংলাদেশে।

মেট্রোরেল
প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে (জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা) মেট্রোরেলের বিভিন্ন সমীক্ষা কাজ শেষ হয়েছে। দরপত্র আহ্বানও চূড়ান্ত। এখন মূল কাজ শুরুর অপেক্ষামাত্র।

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে মেট্রোরেলের মূল কাজ।   উত্তরা ৩য় ফেইজ থেকে মিরপুর-পল্লবী হয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করা হবে। আর ২০১৯ সালেই মেট্রোরেল চালু হয়ে যাবে।

এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে
২০১৪ সালে উড়াল সড়কের (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এখন মোবিলাইজেশন চলছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এ পথ নির্মাণ করা হবে। ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ উড়ালপথ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মানুষ এ উড়াল সড়কের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে
শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত আশুলিয়া এলাকার যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও গতি আনতে সেখান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আরেকটি উড়াল সড়ক (এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে) কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই ও মূল নকশা প্রণয়ন হয়ে গেছে। নতুন বছরে এর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

পাতালরেল
যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বিদায়ী বছরে নতুন কৌশলগত পরিকল্পনায় চূড়ান্ত করেছে সরকার।

এতে রয়েছে- ৫টি মেট্রোরেল রুট এবং ২টি বিআরটি বা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট রুটের প্রস্তাব। প্রস্তাবিত মেট্রোরেল রুট-৫ হবে গাবতলী থেকে মিরপুর-১, মিরপুর-১৪ থেকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ-মাদানি অ্যাভিনিউ-নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত। যার অর্ধেক রাস্তা হবে মাটির নিচ দিয়ে (পাতালরেল)।

ইতোমধ্যে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা পাতালরেল নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় দেখা গেছে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এসব পরিকল্পনার মধ্যে মেট্রোরেলের ৫টি রুট, ২টি বিআরটি রুট ছাড়াও ঢাকা মহানগরীকে ঘিরে বৃত্তাকার ৩টি রিংরোড এবং ৬টি এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে পাঁচটি মেট্রোরেল বাস্তবায়নেই প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার দরকার হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার দু’টি মেট্রোরেলের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ-মাদানি অ্যাভিনিউ-নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী জাইকা ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন
ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে চারলেন প্রকল্পের কাজ। নতুন বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোটা পথ হবে চারলেনের। প্রকল্পের আওতায় ১৭টি সেতু, ২৩৫টি কালভার্ট, ১৪টি বাইপাস, ১১৫ কিলোমিটার বেইজ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

বাঁক সংস্কার
দুর্ঘটনাপ্রবণ ১৪৪টি বাঁককে (ব্ল্যাকস্পট) দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্তি করতে ১৬৫ কোটি টাকার যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিলো গত বছর তা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

বিআরটিএ
এ বছর বিআরটিএ তার ব্রিটিশ আমলের আইন থেকে বের হয়ে নতুন দুটি আইন প্রস্তুত করেছে, যা সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আর জনবল বেড়েছে বিআরটিএ-তে । গতি এসেছে সংস্থাটির কাজে। অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ক্রটিপূর্ণ যানবাহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে এখন প্রতিদিন ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিআরটিএ।

বিআরটিসি 
ছোট-বড়, দ্বিতল এবং আর্টিকুলেটেড মিলে বিআরটিসি’র বহরে বাস আছে ১৫৩২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৬টি বাস চলমান আছে বলে জানায় সংস্থাটি। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের চলতি ও আগের মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি নতুন বাস সংযোজিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা নগরে বিআরটিসি’র নগর সার্ভিস হিসেবে বর্তমানে ৪১টি রুটে ৯৫টি একতলা, ২৭১টি দ্বিতল, ৪৮টি আর্টিকুলেটেড এবং ৪৩টি একতলা এসি বাসসহ মোট ৪৫৭টি বাস চলে। যা ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ বেড়েছে।

জনগণের চাহিদা ও যানজট নিরসন এবং আরামদায়ক উন্নত যাত্রী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় ৫০০টি ট্রাক, ৩০০টি দ্বিতল, ১০০টি আর্টিকুলেডেট, ২০০টি একতলা এসি ও ১০০টি একতলা নন এসি বাস সংগ্রহের কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে বিআরটিসি।

নতুন ২টি আইন
বিদায়ী বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ আইন ও আরেকটি পরিবহন আইন-আরটিএ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরটিএ সচিব শওকত আলী বাংলানিউজকে জানান, বিআরটিএ আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন তা স্থায়ী কমিটির হাতে রয়েছে। এরপরেই সংসদে পাস হওয়ার জন্য উঠবে। আর আরটিএ আইনটি খসড়া আকারে রয়েছে। এটি এখনও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি।

দেশে এখন যে আইনে সড়ক পরিবহন এবং চালক, যাত্রী ও মালিকদের বিষয় বলা হয়েছে, সেটি প্রায় ৭৫ বছর পুরনো মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।