ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৫

সড়কে ঝরল ৮৪ প্রাণ

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
সড়কে ঝরল ৮৪ প্রাণ ছবি: প্রতীকী

কক্সবাজার: পঞ্জিকার পাতা উল্টে আসছে নতুন একটি বছর।   কীভাবে নতুন বছরকে রাঙিয়ে তোলা যাবে তা নিয়ে বিভিন্নজনের আছে বিভিন্নরকম পরিকল্পনা।

  কিন্তু নতুন বছরটি কেমন যাবে সেইসব মানুষগুলোর, যারা আকস্মিক কোন দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন প্রিয়জনদের।

২০১৫ সালের কক্সবাজার জেলায় শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৮৪টি প্রাণ। এছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ।   ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের ওপর বসানো অবৈধ হাটবাজারই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরে কক্সবাজার সদর উপজেলায় নিহত হয়েছেন ২০ জন, রামুতে ৫ জন, চকরিয়ায় ৩২ জন, পেকুয়ায় ৪ জন, উখিয়ায় ৭ জন ও টেকনাফ উপজেলায় ১৬ জন।   টেকনাফ থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার সড়কের ৭৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের ওপর বসানো ৬৭টি অবৈধ হাটবাজারের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার অংশের ১১৫ কিলোমিটার সড়কে বিপজ্জনক বাঁকে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে কেউ মামলা করেননি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও নিসচা’র প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বছরের প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে ২ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ গেট সংলগ্ন এলাকায়। এদিন মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী জনি সেন (১৮) ও শহিদুল ইসলাম (১২) নিহত হন।

এছাড়া জানুয়ারি মাসেই কক্সবাজার সদরে বাসের ধাক্কায় এক নারী পথচারী ও বাসে চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাস চাপায়, ট্রাক-প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুই শিশুসহ ৫জন।

২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁওয়ের ইসলামাবাদ এলাকায় বাস খাদে পড়ে মা-ছেলেসহ ৩ জন নিহত হন। সেদিনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য কামালউদ্দিন (৪৫)। ৩০ অক্টোবর কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা জানারঘোনা এলাকায় আরেকটি বড় দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন। এছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মারা যান নারীসহ আরও ৫জন।

রামুতে বছরজুড়ে পিকআপ ভ্যান-কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন দুই শিক্ষার্থীসহ ৫জন।   ১৬ জানুয়ারি চকরিয়ায় পিকনিক বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসফিয়া ইসমাইল তাম্মীসহ ৪ জন নিহত হন।

চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকা ৪ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন সেনা সদস্য নিহত হন।   তারা হলেন, ১০ ইসিবি’র সদস্য শফিকুল ইসলাম ও নাইম উদ্দিন।   এছাড়া পুরো বছরে চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ প্রাণ হারান আরও ২৬জন।

পেকুয়া উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রী-ব্যবসায়ী-গাড়িচালক সহ নিহত হন চারজন।   উখিয়ায় ৩ জানুয়ারি বছরের শুরুতে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০ জন আহত হন।   এছাড়া উখিয়ার ধুরুমখালিতে টমটম গাড়িতে ওড়না পেঁচিয়ে শিশু ইয়াছমিন (৬) সহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৫জন।

১৫ মার্চ টেকনাফ স্থলবন্দর এলাকায় মাইক্রোবাস-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন।   ১মে টেকনাফ সড়কের রাবেতা নামক এলাকায় লবণবাহী ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে নিহত হন স্বামী-স্ত্রী। এছাড়া টেকনাফে বছরজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান শিশু-বৃদ্ধসহ আরও ১০জন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সরকার নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ করলেও কয়েক দিনের মাথায় আবার বসছে। জনবল সংকটের কারণে এসব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত এসব অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।