ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১১৩তম জন্মবার্ষিকী শুক্রবার

পল্লীকবির বাড়ি হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
পল্লীকবির বাড়ি হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: ‘ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’ বা ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়/ গাছের ছায়া লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়’ কিংবা ‘বাবু সেলাম বারে বার, আমার নাম গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ী পদ্মার পাড়’- এমন শত কবিতা, গল্প, নাটক আর গানের মাধ্যমে পল্লী মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাইতো পেয়েছিলেন পেয়েছিলেন পল্লীকবি উপাধি।



সেই মাটি ও মানুষের কবি জসীম উদ্‌দীনের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী শুক্রবার (১ জানুয়ারি)।

১৯০৩ সালের এই দিনে ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের ছায়াঢাকা পাখি ডাকা নিঝুম পাড়াগাঁ তাম্বুলখানা গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতার নাম আনছার উদ্‌দীন, মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৩৯ সালে মমতাজ বেগমকে বিবাহ করেন। কবির ৪ ছেলে কামাল আনোয়ার, ড. জামাল আনোয়া, ফিরোজ আনোয়ার ও খুরশীদ আনোয়ার এবং ২ মেয়ে হাসনা জসীম উদ্‌দীন মওদুদ ও আসমা এলাহী স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। বড় মেয়ে হাসনার জামাতা সাবেক উপ রাষ্ট্রপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও ছোট মেয়ের জামাতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী।

কবির শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুর শহরের হিতৈষী স্কুলে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯২১ সালে ম্যাট্রিক, ১৯২৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তিনি ১৯৩১ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে এমএ পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬১ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন বাল্যবয়স থেকেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তৎকালীন কল্লোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। এরপর তার ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। পল্লীকবির অমর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে, নকঁশী কাথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, এক পয়সার বাঁশি, রাখালি, বালুচর প্রভৃতি।

পল্লীর মানুষের সংগ্রামী জীবন-জীবিকার কথা সাহিত্যের পাতায় তুলে ধরে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে উঁচু করে রেখে গেছেন জসীম উদ্‌দীন।

কবি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।

পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীনের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে ফরিদপুর শহরতলীর অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন। অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা।

কবির সমাধিস্থলের পাশের জসীম উদ্যানে পক্ষকালব্যাপী জসীম মেলার প্রস্তুতি চলছে। তবে মেলা শুরু হবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

দেশের লোকজ, পল্লী ও বাউল ঐতিহ্য বিকাশের লক্ষ্যে জসীম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর মেলাটির আয়োজন করা হচ্ছে।

এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দুই শতাধিক দোকানে বাঁশ, বেত, কাঠ, মৃৎসহ বিভিন্ন লোকজ শিল্পের পসরা বসবে। জেলার শতাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রতিদিন বিরামহীনভাবে আয়োজন করা হবে লোকজ, পল্লী, বাউল, লালন, জারি, সারি, গীতিনাট্য,  বিচার ও পালাগান। পুতুল নাচ, সার্কাস, যাদু, মৃত্যুকূপসহ নানা খেলাও মেলায় আগতদের মুগ্ধ করে রাখবে। স্থানীয় শিল্পীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে জসীম মঞ্চ।

বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ২০১১ সালে কবির বাড়িটিকে ঘিরে একটি মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালের শেষদিকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি মিউজিয়ামটি। এছাড়া কবির বাড়ির রাস্তাটিও সরু হওয়ায় মেলা বসার পর দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।

এখন ফরিদপুরবাসীসহ কবি ভক্তদের দাবি, যতো দ্রুত সম্ভব মিউজিয়ামটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পাশাপশি দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের বিশ্রামের ব্যবস্থা হলেই কবির বাড়িটি জেলার অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।