ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকার অভাবে প্রকল্পই বাতিল, কেনা হচ্ছে না ২৬৪ রেল কোচ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
টাকার অভাবে প্রকল্পই বাতিল, কেনা হচ্ছে না ২৬৪ রেল কোচ! কেনা হচ্ছে না রেল কোচ, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অসমাপ্ত রেখেই তিনটি প্রকল্প বাতিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সুবজ পাতা থেকে প্রকল্পগুলো বাতিলে পরিকল্পনা...

ঢাকা: অসমাপ্ত রেখেই তিনটি প্রকল্প বাতিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সুবজ পাতা থেকে প্রকল্পগুলো বাতিলে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠিও দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।

ফলে সরকারি অর্থের অপচয় করেও শেষ পর্যন্ত এগুলোর সুফল থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন সাধারণ।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিনটির মধ্যে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৬৪টি মিটারগেজ (এমজি) যাত্রীবাহী কোচ ও দু’টি ব্রডগেজ (বিজি) ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৯৮৩ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। এ সময়ে কেনা হয়নি একটি কোচও।
 
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অর্থায়নের অভাবে ২৬৪টি কোচ কেনা হচ্ছে না। আশায় আশায় আর কতো দিন থাকবো? প্রকল্পটি সবুজ পাতা থেকে বাদ দিতে পরিকল্পনা কমিশনে সুপারিশ করেছি। তবে সরকারের পরিকল্পনা থেকে বাতিল হয়নি। আমরা ইআরডি’কেও (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) চিঠি দিয়েছি। তারা যদি অর্থের সংস্থান করে, তখন প্রকল্পটি আবারও গ্রহণ করা হবে’।

‘এটি ছাড়াও আরও দু’টি প্রকল্প সবুজ পাতা থেকে বাতিল করা হচ্ছে। কারণ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনেক দীর্ঘ। অর্থায়ন যদি না হয়, তবে দীর্ঘ তালিকা রেখে লাভ কি?’
 
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) শর্ত অনুসারে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) আওতায় ২৬৪টি এমজি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহে ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন টেন্ডার মেথডে (ওটিএম) দু’বার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কোনো দরদাতার দরপত্র কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

পরে বৈদেশিক ঋণ সহায়তার জন্য  ২০১৪ সালে ইআরডি’তে চিঠি দিয়েছিলো রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু অর্থায়নের কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সূত্র জানায়, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ১৬ দশমিক ১৮ অনুসারে কোনো প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে সমাপ্তি ঘোষণা আইএমইডি’র সুনির্দিষ্ট  মতামতের ভিত্তিতে হবে। তার আগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের ভিত্তিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ত্ব নিয়োজিত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী অনুমোদন করবেন।

অন্যদিকে ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, সেফগার্ড পলিসি, বিস্তারিত ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ও টেন্ডারিং সার্ভিস দেওয়ার লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা’ প্রকল্পটিও সবুজ পাতা থেকে বাতিলের প্রস্তুতি চলছে। ১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালের মে থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। গত নভেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিতে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ০ দশমিক ১৫ শতাংশ।
 
একইভাবে ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে রফতানি অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগারি সহায়তা’ প্রকল্পেরও অগ্রগতি নেই। ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের মার্চ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
 
বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করায় প্রকল্প দু’টিও বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণার প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।

ফলে বৈদেশিক অর্থায়নের অভাবে বাতিল হতে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তিনটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।