ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেন্টমার্টিনে ঝুঁকিপূর্ণ জেটি, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
সেন্টমার্টিনে ঝুঁকিপূর্ণ জেটি, দুর্ঘটনার আশঙ্কা সেন্টমার্টিনে ঝুকিপূর্ণ জেটির ওপর হাজারও পর্যটক। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: সেন্টমার্টিন দ্বীপের সেই জেটিঘাটে অবস্থান নিয়েছে পাঁচ-সাতটি পর্যটকবাহী জাহাজ। সেসব জাহাজে ওঠার জন্য জেটির ওপর ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছে হাজারও শিশু, নারী ও পুরুষ। জেটির বিভিন্ন অংশে রেলিং ভেঙে যাওয়ায় হাজারও পর্যটক অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণভাবেই জেটির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যেই মাঝে মাঝে চলছে সামনে যাওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কির প্রতিযোগিতা, সে দৃশ্য আরও ভয়াবহ। শত শত পর্যটক যেন এখনই সাগরে পড়ে যাবেন! আর কাঠের পাটাতন বেয়ে জাহাজে ওঠার দৃশ্য আরও ভয়ংকর।

এভাবেই সেন্টমার্টিন জেটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বর্ণনা করলেন খাগড়াছড়ি থেকে আসা স্কুলশিক্ষক পিপলু রাখাইন নামে এক পর্যটক।

তিনি বলেন, বড় জাহাজে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি যখন পৌঁছলাম, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে বার বার মুগ্ধ হচ্ছিলাম।

কিন্তু জাহাজ থেকে নেমে জেটিতে যখন উঠি, তখন মনে হয়েছে জেটি পুরোপুরি নিরাপদ নয়। বিশেষ করে ফেরার পথে জেটির ওপর যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছি, তাতে রীতিমত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

সেন্টমার্টিনে ঝুকিপূর্ণ জেটির ওপর হাজারও পর্যটক।  ছবি: বাংলানিউজ

শুধু তিনি নন, অনাবিল সৌন্দর্য্যের হাতছানি দেওয়া দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণের আনন্দ মলিন করে দিচ্ছে দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ এ জেটি। একমাত্র জেটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পর্যটকদের জাহাজে ওঠানামা করতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে। এ অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে এটি সংস্কার অথবা বিকল্প জেটি নির্মাণ করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পর্যটকরা।  

সেন্টমার্টিন ঘুরে আসা পর্যটক জিয়াউর রহমান সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাচ্ছেন। কিন্তু জেটির কারণে পর্যটকদের ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে সেন্টমার্টিন পৌঁছায়। আবার ফিরতে হয় বিকেল সাড়ে ৩টায়। দেখা যায়, আড়াই-তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে এক ঘণ্টা জেটিতে ওঠানামায় চলে যায়। এছাড়া ঝুঁকি তো আছেই।

দ্বীপের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার শামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে যে জেটি রয়েছে, সেটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে সংস্কার করা হলেও তা বেশিদিন টেকে না। যে কারণে এ জেটি দিয়ে চলাচলে পর্যটকদের দারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তার মতে, দ্বীপের উত্তর এবং পূর্বপাশে দু’টি জেটি থাকা দরকার। দু’পাশেই নিরাপদ সৈকত রয়েছে। একদিক দিয়ে আসবে, অন্যদিক দিকে যাবে। ওয়ানওয়ে জেটি হলে আর ভোগান্তি থাকবে না।  

তিনি বলেন, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও শুধু জেটির কারণে বিশেষ করে ফেরার পথে জাহাজে ওঠার ভোগান্তি পর্যটকদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা নিরসর করা জরুরি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৫ সালে এ জেটি নির্মাণ করা হয়। কাজের মান ভাল না হওয়ায় মাত্র ১৫ বছরেই এটির জরাজীর্ণ অবস্থা। ভেঙে যাওয়া রেলিং কয়েক মাস আগে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটন মৌসুম শেষ না হতেই তা আবার আগের রূপে ফিরে যাচ্ছে।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ এ জেটি জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের পাশাপাশি দ্বীপের দু’পাশে দু’টি জেটি নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ।  

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য্য ম্লান করে দিচ্ছে ঝুঁকির্পূণ এ জেটি। পর্যটকরা এ জেটি থেকে নামতে আতংক বোধ করেন। তাই জরুরিভিত্তিতে এটি সংস্কারের পাশাপাশি দ্বীপের দু’পাশে দু’টি জেটি নির্মাণ করা দরকার।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে এ জেটি নির্মাণের পর জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেই থেকে এ জেটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে জেটি সংস্কার করা হয়। তারপর সেটি আবার আগের রূপে ফিরে যায়। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

নতুন জেটি নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলা পরিষদের এত বড় বাজেটের কাজ করার সক্ষমতা নেই। সেটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) করতে পারে। স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে এলজিইডির কাছে আমরা পুরনো জেটি সংস্কার এবং নতুন একটি জেটি তৈরির জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এসবি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।