ঢাকা, রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোংলায় ফসলি জমিতে ডাম্পিংয়ের প্রতিবাদে গ্রামবাসীর অবস্থান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২১
মোংলায় ফসলি জমিতে ডাম্পিংয়ের প্রতিবাদে গ্রামবাসীর অবস্থান

খুলনা: মোংলার চিলা ইউনিয়নে পশুর নদীর তীরে অবৈধভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের বালু ফেলানোর নামে ধান চাষের জমি ও মৎস্য ঘের দখলের হাত থেকে রক্ষা পেতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রামবাসী।

সোমবার (০৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা গ্রামে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ।



অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চিলা ইউনিয়নের ১১ নম্বর চিলা মৌজার এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. আলম গাজী।

তিনি বলেন, বিগত কিছু দিন ধরে শুনতে পারছি, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ নাকি মোংলা বন্দর পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং করার জন্য ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিংকৃত মাটি পশুর নদীর তীরবর্তী জমিসমূহে ফেলার জন্য মালিকানা জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু আমরা এলাকাবাসী ওই জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও আমাদেরকে না জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের তাদের ইচ্ছা মাফিক কাজ শুরু করেছে। বসত ও কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা ছাড়াই এবং ওই জমির মালিকদের অনুকূলে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক আমাদের মৎস্য ঘেরে পানি অপসারণ করে মাটি কেটে তাতে যেভাবে ডাইক নির্মাণ করে তাতে মাটি ভরাট করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ যে প্রক্রিয়ায় এ কাজ করতে চাচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ ও আইনের পরিপন্থি।  

মোংলা উপজেলাধিন ৬ নম্বর চিলা ইউনিয়নের ১১ নম্বর চিলা মৌজার বিভিন্ন জমির মালিক আমরা। আমাদের বেঁচে থাকা, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন ধারনের একমাত্র সহায় সম্বল ও লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া জমিতে মৎস্য ও সামান্য কৃষি কাজ করে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বর্তমানে চলতি মৌসুমে ওই জমিতে মৎস্য ও ধান চাষ চলছে।  

পরিবার পরিজনসহ কোনো মতে টিকে আছি। এছাড়াও মৎস্য চাষ মৌসুমের প্রায় অর্ধেক সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন মাছ ধরার সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে আমাদের করা মৎস্য ঘেরের মৌসুমে ঘেরের গেট বা ঘৈ কেটে দিয়ে ওই সব ঘেরের পানি অপসারণ করে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিশাল উঁচু ডাইক নির্মাণ করছে। আমরা তাদের এসব কাজে বাধা দেওয়া বা তাদের কাছে আমাদের জমির ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে তারা বলেন, জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দিয়েছি বলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়।  

এমনকি চীনারাসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা জমির মালিক কৃষক ও চিংড়ি চাষিদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। কিন্ত উপজেলা প্রশাসনের কাছে গেলে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এমতাবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষসহ জেলা, উপজেলাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আমরা এর আগে বহু আবেদন নিবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে বাধ্য হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দর সচল করতে পশুর নদীর চ্যানেলের ইনার বারের ড্রেজিং করার ক্ষেত্রে আমাদের সার্বিক সহযোগিতায় কোনো ঘাটতি নেই। তবে আমাদের তফসিল বর্ণিত জমি জেলা প্রশাসক কর্তৃক অধিগ্রহণ করে, আমাদের জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিলে, আমরা অন্যত্র জমি কিনে অন্তত পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারবো।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) শেখ শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ পাবে। এটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন।

শওকত বলেন, ওই স্থানের জমির মালিক বেশিরভাগ বড় বড় কোম্পানির। যারা  এখানে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে কিনেছিলো। কিন্তু সুন্দরবনের ১০ কিলো মিটারের মধ্যে ভারি কল-কারখানা তৈরি করা যাবে না হাইকোর্টের এমন নিষেধাজ্ঞার কারণে জায়গাগুলো পড়ে রয়েছে। যেগুলো স্থানীয়রা লিজ নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করছেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ মূল মালিকদের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। যারা জমি লিজ নিয়েছেন তারা এখন আন্দোলন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।