ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

‘কি পাইলাম? মোড়’

আরিফ সাওন, বাংলানিউজের পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
‘কি পাইলাম? মোড়’

ফরিদপুর থেকে: মানুষ আশায় বুক বাধে পাওয়ার আশায়। যাই করুক না কেন, সব কিছুতেই কিছু না কিছু পেতে চায়।

প্রত্যাশার চেয়ে যদি কম কিছু পায় বা কিছু করে যদি কিছু না পায়, তখন হা-হুতাশ করে। আর মনের কাছে জিজ্ঞেস করে, কি পেলাম?

ফরিদপুরে একটি মোড়ের নাম আছে ‘কি পাইলাম? মোড়’। একটা মোড়ের নামকরণেও ফুটে উঠেছে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। মোড়টি ফরিদপুরের টেপাখোলা রেল লাইন ও গরুর হাটের পাশে।

ফরিদপুরের বর্তমান যুবদলের সভাপতি আবজাল হোসেন খান পলাশের বাসাও এই মোড়ের কাছে। মোড়টি ইংরেজি ‘ওয়াই’ আকৃতির। জিরো পয়েন্টে একটি শোভাবর্ধনকারী গাছ আছে। আছে একটি বৈদ্যুতিক খুটি। ডান পাশে রয়েছে চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে নেমে গেছে গ্রামের রাস্তা। রাস্তার অপরপাশে ঔষুধের দোকান। নাম হামিদ মেডিকেল হল। দোকানের দুই পাশে রয়েছে আরো দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। দোকানের উপর সাইবোর্ডে লাল বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে‘ কি পাইলাম? মোড়’। সবারই দৃষ্টি কাড়ে এ লেখাটি। অপরিচিত অনেকেই এই সড়ক দিয়ে ফরিদপুর লেকের পাড় কিংবা ধলারপাড়ে যাওয়ার সময় মোড়ের নামকরণ দেখে অবাক হন।

শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি এই মোড়ের সাইনবোর্ড দেখে অবাক হন। ভাবনায় পড়ে যান। নামকরণের তাৎপর্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। একদিকে নামের সাথে না পাওয়ার বেদনা অনুভব করেন। আরেক দিকে নামটা দেখে মনের অজান্তে হেসে ফেলেন। মনে মনে বলেন, মোড়েরও এ ধরনের নাম হতে পারে।

খোদ ফরিদপুরের অনেকেই এই মোড়ের নামকরণের ইতিহাস জানেন না। মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, হয়তো ছেলেরা মজা করে এই মোড়ের নাম রেখেছে। স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীসহ ফরিদপুরের আরো অনেকের সাথে কথা হয়। কিন্তু কেউই নামকরণের কারণ বলতে পারেন নি।

ঢাকা ফেরার পর আরটিভির ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর রাজীব খানের কাছ থেকে জানা গেল এই মোড়ের নামকরণের সঠিক কারণ। এই মোড়ের পাশেই তাঁর বাড়ি। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯২ সালে এই মোড়ের নামকরণ করা হয়। তৎকালীন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা এই নামকরণ করেন। তারা এই মোড়ে বসে আড্ডা দিতেন। তখন ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন আবজাল হোসেন পলাশ। আর বর্তমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ছিলেন মন্ত্রী। তখন একটু ঝামেলার কারণে আবজাল হোসেন পলাশের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। পলাশের বন্ধুদের আটক করে নিয়ে যায়।

পরে শহরে মিছিল-মিটিং, অবরোধ ডেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ফরিদপুর অচল করে দেয়। আবজাল হোসেন পলাশের মত প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতার বাসায় দল ক্ষমতায় থাকতে পুলিশি অভিযানে নেতাকর্মীরা হতবাক। দল করে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষেন। আর হতাশ হন। হতাশা, দলীয় সিনিয়র নেতাদের প্রতি বিদ্রুপ আর প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা মোড়ের নাম দেন ‘কি পাইলাম? মোড়’।

এখন এই মোড় আর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ভিড়ে মুখরিত হয় না। একপ্রকার জনশূন্যই থাকে। নেই সেই দ্বন্দ্ব, চায়ের দোকানে বসে মেলানো হয় না আর পাওয়া না পাওয়ার হিসেব। তবুও শুধু স্মৃতি বহন করে আছে ‘কি পাইলাম? মোড়’।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।