ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সন্তোষ মণ্ডলকে মনে পড়ে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
সন্তোষ মণ্ডলকে মনে পড়ে! সন্তোষ মণ্ডল। ফাইল ফটো

তরুণ সাংবাদিক সন্তোষ মণ্ডলের মৃত্যুর এক বছর দেখতে দেখতে চলে এলো। এখনও তার স্মৃতি সজিব সকলের কাছে। তার কথা বার বার মনে পড়ে। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

গত বছর একদিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে প্রিয় মিনহাজের স্ট্যাটাসে জানতে পারি, অনুজতুল্য সাংবাদিক সন্তোষ মণ্ডল আমেরিকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। শোক সংবাদটি বিপুল সমবেদনায় সিক্ত হয়েছে।

বহুজন স্মৃতি ও আবেগে স্মরণ করেছে সন্তোষকে। সেই স্মৃতিরও বছর অতিক্রম হলো। কত তাড়াতাড়ি দিন আসে দিন যায়!

আশি দশকে আমাদের অধ্যয়নকালে সন্তোষ ছিল জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের অপরিহার্য চরিত্র। আমরা যারা পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি, সাহিত্যকর্ম ও সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম, দলমত নির্বিশেষে তাদের ছিল একটি বড় গ্রুপ। জাহাঙ্গীরনগর তখন বর্ধিষ্ণু। সবাই ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে চিনতেন, জানতেন। আগে-পরের পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পর্কের একটি সেতুবন্ধ রচিত ছিল। ছিল সৌহার্দ্য ও সহমর্তিতার মায়াবী পরশ। স্মরণ করতে পারি, ফারুক মেহেদী, শেখর ইমতিয়াজ, লিয়াকত আলি খান পান্না, ফিরোজ আহমদ, আবদাল আহমদ, কাওসার হুসায়েন, জিল্লুর রহমান, কফিল আহমেদ, আনিসুর রহমান বাবু, মাসুদ হাসান খান, শিশির মোড়ল, কামরুল ইসলাম, জাহেদ জাহেদী, আশরাফ কায়সার প্রমুখ অগ্রজ-সহপাঠী-অনুজদের।

সন্তোষ ছিল এই দলের তরুণতম সদস্য। ইতিহাস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে সে বিভাগ ও ক্যাম্পাসে সরব ছিল। আমি ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসাবে প্রথমে ইতিহাসে ভর্তি হলেও মাস তিনেক পর সরকার ও রাজনীতি বিভাগে চলে আসি। উভয় বিভাগের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ অটুট থাকে। সন্তোষকে সার্বক্ষণিকই সঙ্গে পাই। তদুপরি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রিপোর্টিং-এ জড়িত থাকায় আমাদের নিত্য সংযোগ বহাল থাকে।

শিক্ষা জীবন শেষে কিছুদিন ইত্তেফাক ভবনে সাপ্তাহিক রোববার-এ সাংবাদিকতা করার পর আমি স্থায়ীভাবে শিক্ষকতার পেশা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি। সন্তোষ সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেয়। টিভি চ্যানেল হয়ে শেষ পর্যন্ত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের দায়িত্ব পালন করছিল সন্তোষ। দেখা হলেই খুলনা-যশোরের প্রমিত উচ্চারণে ‘গুরু ক্যামন আছেন?’ বলে সাদরে সম্ভাষণ জানিয়েছে। নিয়ে গেছে পদ্মা প্রিন্টার্স ভবনের সুউচ্চ অফিস কক্ষে। শাহবাগ-আজিজে দেখা পেলে কনকর্ড টাওয়ারের বাসায় যেতে বাধ্য করেছে। মাস কয়েক আগে ন্যাম ভবনে আমরা একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে মিলিত হই। সেখানে সন্তোষ ছাড়াও আরো ছিলেন রাষ্ট্রপতির জেষ্ঠ্যপুত্র, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মওলানা আবেদ আলী। সেখানে নানা বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ হয়। আমি সন্তোষের কর্মস্পৃহা ও নানা পরিকল্পনার কথা জেনে বিমুগ্ধ হয়েছিলাম। তার ছিল নানা ধরনের স্বপ্ন এবং বহুবিধ কাজ করার আগ্রহ। সব কিছুই সে লালন করছিল অতি সন্তর্পণে মনের গভীরে।

এরই মাঝে একদিন ফেসবুকে সন্তোষের মেসেস পেলাম, সে আমেরিকায় চলে গেছে। নিউইর্য়ক থেকে প্রায়ই সে আমাকে মেইল করেছে; ছবি শেয়ার করে পাঠিয়েছে। আমি তার জীবনের বর্ণিল ছবিগুলো দেখে তৃপ্ত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, বিশ্বায়নের এই যুগে সে ভুবনজোড়া কাজের পরিধি বিস্তৃতিতে লিপ্ত। বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার অভিবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে বড় মাপের কোন কাজের সন্ধানে সে দেশান্তরি হয়েছে ভেবে আমি আনন্দিতই হয়েছিলাম। কিন্তু তখন কে জানতো, তলে তলে তার মধ্যে বাসা বেঁধেছে মরণ ব্যাধি।

আমেরিকা যাওয়া যে তার জন্য জীবন থেকে একেবারেই চলে যাওয়া হবে, সেটা সন্তোষ বা আমরা, কেউই ভাবি নি। দূরদেশে প্রিয় সর্তীথের প্রয়াণে বেদনার বাক্যাবলীই ভিড় করছে চেতনার মর্মমূলে। চিরকালীন প্রবাসে ভালো থেকো তুমি। তুমি বেঁচে থেকো আমাদের স্মৃতি ও স্মরণে: জাহাঙ্গীরনগরের ঘেরুয়া মাটির লালাভ প্রচ্ছায়ায়; ইতিহাস বিভাগের প্রত্ন দালানগুলোর প্রলম্বিত রোদেলা প্রতিবিম্বে; ঢাকা-রমনার রমণীয়-সবুজের বর্ণিল মায়ায়। গুডবাই সন্তোষ মণ্ডল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।