ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জীবিত করার মন্ত্র শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৭
তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জীবিত করার মন্ত্র শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বয়স এখন ছেচল্লিশ। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর এই এগিয়ে যাবার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে তরুণ সমাজ। তরুণদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় এই অগ্রগতির মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন, থাকবেন। বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় দীক্ষিত।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এই এগিয়ে চলায় বাংলা ও বাঙালিকে উদ্দীপিত করছে তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আর নীরবে পাথেয় হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।

তিনি যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বারবার বলে গিয়েছিলেন, আজ আমরা সেই মুক্তি অর্জনের পথে। বঙ্গবন্ধু প্রায় বক্তব্যে বলতেন, ‘দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। একটি দেশের সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটিই তরুণ সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তরুণরা বেকার থাকলে তারা বিপদগ্রস্ত হয়, দেশের জন্য ক্ষতিকর বোঝায় পরিণত হয়। আর কোনো দেশের তরুণ সমাজ যদি কর্মঠ হয় এবং কাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, তাহলে ওই দেশের দ্রুত উন্নতি কেউ আটকাতে পারে না। তরুণদের দীপ্ত মেধা এবং সতেজ জ্ঞানের গতি এই সবুজ-শ্যামল বাংলাকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারে। ’

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে পরিচিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। পোশাক ও জনসংখ্যা রপ্তানিতে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে মডেল। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব উন্নয়ন সূচকের ক্রম অগ্রগতি, গড় আয়ু বৃদ্ধি বাংলাদেশকে নতুন রূপে পরিচিতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ আর শুধু সঙ্গীতে নয়, বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক মহান মানবের প্রতিচ্ছবি। তিনি সৃষ্টিশীলতার আলো ছড়িয়েছেন সব ক্ষেত্রে। পৃথিবীতে খুব কম রাজনীতিবিদেরই এমন বিরল কৃতিত্ব রয়েছে। তিনি একটি দেশের স্থপতি। একজন মহান জননেতা। এর চেয়ে মহৎ কৃতি আর হতে পারে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু দেশের যে বড় বড় সমস্যার সমাধান শুরু করেছিলেন, তরুণদের কর্ম সমস্যা তার একটি। তরুণদের নিয়ে তার অনেক ভাবনা ছিল। তার সৃষ্টিশীল মেধা তরুণদের অল্প পুঁজি থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করেছিল। তা যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতো, তাহলে আজ হয়তো বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবেই বিশ্বের বুকে পদচারণা করত।

আমরাও আজ উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে থাকতে পারতাম, যদি ১৫ আগস্টের ওই নির্মম ঘটনার জন্ম না হতো। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ইতিহাস থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুকে সরানো সম্ভব নয়। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে মনোজগত থেকে বঙ্গবন্ধুকে সরানোর নানা চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু নির্বাসনের পরিকল্পনা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এমন একজন ব্যক্তিত্ব, পাঠ্যপুস্তক কিংবা টিভির পর্দা থেকে সরিয়ে দিলেও, বাঙালির মানস জগত থেকে তাকে সরানো যাবে না।

তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে শুধু ভালোবাসে-তাই নয়, তার জীবনের আদর্শকে অনুসরণ করে, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এইতো সেদিন ফিরে এলাম জাপানের কোমো মোটো শহর থেকে। গিয়েছিলাম তরুণ স্কলারশিপ লিডারশিপ ট্রেনিংয়ে।  এতে ১২৬টি দেশের ১২৬ জন তরুণ লিডার হাজির হয়েছিল। আমি বাংলাদেশের পতাকাবহনকারী একমাত্র তরুণ। সেদিন ছিলাম যেন জাপানের বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশ হয়ে।

প্রতিবছর জুনিয়র চেম্বার জাপান এ আয়োজন করে থাকে। পতাকা হাতে যখন একসাথে সবাই দাঁড়িয়েছি, তখন সত্যি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। বারবার মনে পড়েছিল জন্মভূমির কথা। সেদিন বিশ্ববুকে প্রিয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ানোর যে স্বাদ পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। আর আমার এই স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ানোর স্বাদ নেওয়া হতো না।

ইতিমধ্যেই এ ধরনের অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলার তরুণরা। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ অগ্রসৈনিক আজকের তরুণরা। লাল-সবুজের নিশানা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর।

১৯৭৫ সালের পর থেকে আগস্ট মাস এলেই আমরা শোকার্ত হই। পুরো জাতি ভেঙে পড়ে বেদনায়। যেন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের শোককে, আমরা তরুণরাই শক্তিতে পরিণত করবো। শাণিত করবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থেকে ‘গড়ে তুলব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ’।

শেখ হাসিনার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আজকের তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে সামগ্রিকভাবে উন্নত দেশগুলোর সমান কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন। তার মধ্যে আমি বঙ্গবন্ধুর তরুণ বয়সের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু যেমন বেকার সমস্যা নিয়ে ভেবেছেন, দেশ থেকে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। তেমনি করে এখন সজীব ওয়াজেদ জয়ও দেশের বেকারত্ব গোছাতে কাজ করছেন।

বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে শিখিয়েছেন জাতিকে। তার আত্মার শান্তির জন্য তার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে হবে। আর এভাবেই জাতির জনকের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করে যাব, তার স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে।

লেখক: প্রেসিডেন্ট, চিটাগাং খুলশি ক্লাব লিমিটেড ও এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশ।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।